Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 3:03 am

স্মরণীয়-বরণীয়

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও রাজনীতিবিদ আব্দুর রাজ্জাকের ৮০তম জন্মবার্ষিকী আজ। ষাটের দশকের প্রারম্ভে বাঙালির জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রথম সারির নেতা ও পরিকল্পনাকারীদের অন্যতম ছিলেন তিনি। আব্দুর রাজ্জাক তিনি বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। আব্দুর রাজ্জাক মুক্তিযুদ্ধকালে গঠিত মুজিব বাহিনীর চারটি সেক্টরের একটির সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। স্বাধীনতার পর সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের পুরোভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূরণে মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করেছেন তিনি। আব্দুর রাজ্জাক ১৯৪২ সালের ১ আগস্ট শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার দক্ষিণ ডামুড্যা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৮ সালে ডামুড্যা মুসলিম উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৬০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৬৪ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সম্মান এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি এলএলবি পাস করে ১৯৭৩ সালে আইনজীবী হিসেবে বার কাউন্সিলের নিবন্ধিত হন। আব্দুর রাজ্জাকের ৫০’র দশকের শেষভাগে আয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৬০ সালে ছাত্রলীগে যোগ দিয়ে তিনি সিরাজুল আলম খান ও কাজী আরেফের সঙ্গে ১৯৬২ সালে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে তিন সদস্যের নিউক্লিয়াস গঠন করেন। এই নিউক্লিয়াস স্বাধিকার আন্দোলনকে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও পরবর্তীতে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পথে নিয়ে যায়। আব্দুর রাজ্জাক ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত পর পর দুই বার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ছাত্রলীগের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭০ সালে প্রথমবারের মতো জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৩, ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০৯ সালেও তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আব্দুর রাজ্জাক ১৯৭৯ ও ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক কারণে কয়েকবার কারাবরণ করেন তিনি।  আব্দুর রাজ্জাক স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা গণ-আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি  ২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

 কাজী সালমা সুলতানা