প্রখ্যাত সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নির্মল সেনের ৯২তম জন্মবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৩০ সালের ৩ আগস্ট গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার দীঘিরপাড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ভারত বিভাগের ঠিক আগে ১৯৪৬ সালে তার পুরো পরিবার বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে গেলেও নির্মল সেন এদেশে থেকে যান। শৈশবে কোটালীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনে তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন। তিনি বরিশালের বিএম একাডেমি থেকে ১৯৪৪ সালে মেট্রিকুলেশন ও ১৯৪৬ সালে আইএসসি পাস করে বিএসসিতে ভর্তি হন। ১৯৪৬ সালে তিনি বরিশালের বিএম কলেজ বিএসসির ছাত্র থাকাকালে রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৬১ সালে জেলে বসেই তিনি বিএ পরীক্ষায় অংশ নেন ও কৃতকার্য হন। তিনি ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৪২ সালে নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন মহাত্মা গান্ধীর ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনে অংশ নিয়ে স্কুল গেটে ১৬ দিন ধর্মঘট করার মাধ্যমে নির্মল সেনের রাজনৈতিক জীবনের শুরু। কলেজ জীবনে তিনি অনুশীলন সমিতির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ১৯৪৪ সালে তিনি রেভ্যুলিউশনারি সোশ্যালিস্ট পার্টিতে (আরএসপি) যোগদানের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৯ সালে আদমজীতে শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল নামে রাজনৈতিক দল গড়ে তোলেন তিনি ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে তোলা গণ-আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। তিনি গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের অতিথি শিক্ষক ছিলেন তিনি। নির্মল সেন কিশোর বয়সেই ‘কমরেড’ পত্রিকায় নিয়মিত লিখতে শুরু করেন। ১৯৬১ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার মধ্য দিয়ে নির্মল সেন তার সাংবাদিক জীবন শুরু করেন। তিনি দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক জেহাদ, দৈনিক পাকিস্তান ও দৈনিক বাংলায় পত্রিকাতেও সাংবাদিকতা করেন। লেখক হিসাবেও তিনি যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেন। তার রচিত কয়েকটি প্রবন্ধ ও ভ্রমণকাহিনীর মধ্যেÑ ‘মানুষ’, ‘সমাজ ও রাষ্ট্র’, ‘বার্লিন থেকে মস্কো’, ‘পূর্ববঙ্গ পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ’, ‘মা জন্মভূমি’, ‘লেনিন থেকে গর্বাচেভ’, ‘আমার জবানবন্দী’, ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’, ‘আমার জীবনে ’৭১-এর যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। তিনি ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা