কবি, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, নাট্যকার ও গীতিকার সিকান্দার আবু জাফরের আজ ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি সাহিত্য পত্রিকা মাসিক সমকাল সম্পাদনার জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। তার লেখা ‘জনতার সংগ্রাম চলবেই, আমাদের সংগ্রাম চলবেই’কবিতাটি পরে জনপ্রিয় গণসংগীতে রূপান্তরিত হয়। সিকান্দার আবু জাফর ১৯১৯ সালের ১৯ মার্চ তৎকালীন খুলনার (বর্তমানে সাতক্ষীরা) তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করনে। তার পুরো নাম সৈয়দ আল্ হাশেমী আবু জাফর মুহম্মদ বখ্ত সিকান্দার। তিনি স্থানীয় স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। ছাত্রাবস্থায় মিলিটারি অ্যাকাউন্টস বিভাগের মাধ্যমে তিনি পেশাগত জীবন শুরু করেন। কিন্তু পরে সেই চাকরি তিনি ছেড়ে দেন। সিকান্দার আবু জাফর ১৯৫০ সালে কলকাতা থেকে ঢাকায় আসেন এবং কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত দৈনিক নবযুগে সাংবাদিকতা এবং পরে রেডিও পাকিস্তান, দৈনিক ইত্তেফাকের সহযোগী সম্পাদক, দৈনিক মিল্লাতের প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সাহিত্য পত্রিকা মাসিক সমকাল পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক (১৯৫৭-১৯৭০) ছিলেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ‘সমকাল মুদ্রায়ণ’ ও ‘সমকাল প্রকাশনী’ স্থাপন করেন। সিকান্দার আবু জাফর ছিলেন বহুমুখী মননের মানুষ। গদ্য ও পদ্য রচনায় তিনি সমান দক্ষ ছিলেন। তিনি কিশোর উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতা, নাটক ও সংগীত রচনা করেন। তিনি অনুবাদক হিসেবেও খ্যাত ছিলেন। ষাটের দশকে পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার যে ধারা গড়ে ওঠে, তিনি ছিলেন তার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। পূর্ববঙ্গের সাহিত্য আন্দোলনে নতুন গতির সঞ্চার করেন তিনি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সিকান্দার আবু জাফর স্বাধীনতা, দেশপ্রেম নিয়ে অনেক গান রচনা করেন। তার রচিত ‘বাঙলা ছাড়ো’, ‘জনতার সংগ্রাম’ ও ‘আমার অভিযোগ মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা জুগিয়েছে। আমাদের সংগ্রাম চলবেই’ গানটি মুক্তিযুদ্ধের সময় জনগণকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে: উপন্যাস পূরবী, নতুন সকাল; ছোটগল্প মাটি আর অশ্রু; কবিতা প্রসন্ন শহর, তিমিরান্তিক, বৈরী বৃষ্টিতে, বৃশ্চিক-লগ্ন, বাংলা ছাড়ো; নাটক সিরাজ-উদ-দৌলা, মহাকবি আলাউল, সংগীত মালব কৌশিক। তিনি নাটকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৬) এবং একুশে পদক (১৯৮৪) লাভ করেন। তিনি ১৯৭৫ সালের ৫ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা