বাংলা সাহিত্যের ভুবনজয়ী শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, চিত্রশিল্পী, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ। রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ১২৬৮ বঙ্গাব্দের পঁচিশে বৈশাখ জš§গ্রহণ করেন। তিনি মাত্র ৮ বছর বয়সে লিখতে শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-এ তার ‘অভিলাষ’ কবিতা প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তার প্রথম প্রকাশিত রচনা। ১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশে তিনি ইংল্যান্ড যান। দেড় বছর ইংল্যান্ডে কাটিয়ে ১৮৮০ সালে কোনো ডিগ্রি না নিয়েই দেশে ফিরেন। ১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে নদীয়া, পাবনা, রাজশাহী ও উড়িষ্যার জমিদারি তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ। কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে তিনি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন। ১৯০১ সালে তিনি সপরিবারে শিলাইদহ ছেড়ে চলে আসেন শান্তিনিকেতনে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১২টি উপন্যাস রচনা করেন। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থটির জন্য ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তার লেখা ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়। সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত আছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলি নামে প্রকাশিত হয়েছে। তার যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খণ্ডে চিঠিপত্র ও চারটি গ্রন্থে প্রকাশিত। তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন। তার রচিত আমার সোনার বাংলা ও জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে গান দু’টি যথাক্রমে বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীত। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধি প্রদান করে। রাওলাট অ্যাক্টের বিরুদ্ধে ১৯১৯ সালে ১৩ এপ্রিল পাঞ্জাবের জালিয়ান ওয়ালাবাগে এক মহাসমাবেশে ব্রিটিশ পুলিশের আকস্মিক গুলিতে অসংখ্য মানুষ নিহত হন। বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি নাইট উপাধি ত্যাগ করেন। বিশ্বকবি ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন শান্তিনিকেতন। ১৯২৩ সালে শান্তিনিকেতনেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করেন বিশ্বভারতী বিদ্যালয়। সেখানেই ১৯৪১ সালের ২২ শ্রাবণ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা