Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 6:24 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

সাহিত্যিক ও বাংলাচলিত গদ্যরীতির প্রবর্তক প্রমথ চৌধুরীর ১৫৪তম জন্মবার্ষিকী আজ। তিনি বাংলা সাহিত্যে চলিত গদ্যরীতির প্রবর্তক। বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে প্রমথ চৌধুরীর ছদ্মনাম ছিল ‘বীরবল’। এ নামে পত্রিকার পাতায় লেখালেখি করে তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। তাকে বলা হতো বাংলা সাহিত্যের বীরবল। প্রমথ চৌধুরী ১৮৬৮ সালের ৭ আগস্ট যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস বর্তমান বাংলাদেশের পাবনার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রামে। তিনি কলকাতা হেয়ার স্কুল থেকে এন্ট্রাস ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে এফএ, প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৮৮৯ সালে বিএ (অনার্স) দর্শন এবং ১৮৯০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য বিলাত যান। তার শিক্ষাজীবন ছিল অত্যন্ত কৃতিত্বপূর্ণ। বিলাত থেকে ফিরে এসে প্রমথ চৌধুরী ব্যারিস্টারি পেশায় যোগদান না করে কিছুকাল ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা করেন এবং পরে সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। পরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে অধ্যাপনা করেন। এ ছাড়া সরকারের উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু লেখার প্রতি অতি আগ্রহের কারণে প্রমথ চৌধুরী সরকারি চাকরি ছেড়ে ‘সবুজপত্র’-এর সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। ১৯১৪ সালে মাসিক সবুজপত্র প্রকাশনা এবং তার মাধ্যমে বাংলা চলিত গদ্যরীতির প্রবর্তন প্রমথ চৌধুরীর জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি। এই সবুজপত্রকে কেন্দ্র করে সে সময় একটি শক্তিশালী লেখকগোষ্ঠী গড়ে ওঠেছিল। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথও এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্রী-জামাতা ছিলেন প্রমথ চৌধুরী। তিনি ‘বীরবল’ ছদ্মনামে এ পত্রিকায় ব্যঙ্গরসাত্মক প্রবন্ধ ও নানা গল্প প্রকাশ করেন। তার সম্পাদিত অন্যান্য পত্রিকা হলো বিশ্বভারতী, রূপ ও রীতি এবং অলকা। প্রমথ চৌধুরী মননশীল প্রবন্ধ লেখক ও সমালোচক হিসেবে খ্যাতিলাভ করেন। তারই নেতৃত্বে বাংলা সাহিত্যে নতুন গদ্যধারা সূচিত হয়। তাছাড়া বাংলা সাহিত্যে তিনিই প্রথম বিদ্রƒপাত্মক প্রবন্ধ রচনা করেন। বাংলা সাহিত্যে ইতালীয় সনেটের প্রবর্তন করেন তিনি। প্রমথ চৌধুরী ইংরেজি ও ফরাসি সাহিত্যে সুপণ্ডিত ছিলেন। ফরাসি সনেটরীতি ট্রিয়লেট, তের্জারিমা প্রভৃতি বিদেশি কাব্যবন্ধকে বাংলা কাব্যে প্রবর্তন করেন তিনি। তার রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ তেল-নুন-লাকুদ, সনেট পঞ্চাশৎ, চার-ইয়ারি কথা, বীরবলের হালখাতা, পদচারণ, রায়তের কথা, নীললোহিত আত্মকথা প্রভৃতি। ১৯৪১ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক জগত্তারিণী স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। ১৯৪৬ সালের ২ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা