প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক, তারেক মাসুদের আজ একাদশ মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ১৯৫৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার নূরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে মাদরাসায় তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি সাধারণ শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি ফরিদপুরের ভাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে আইএ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগে স্নাতক পাস করেন। এর পরপরই তিনি প্রামাণ্যচিত্র ‘আদমসুরত’ নির্মাণকাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকাকালে তারেক মাসুদ রাজনীতি, শিল্প-সংস্কৃতি ও দর্শনচর্চায় নিজেকে যুক্ত করেন। আশির দশকে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তারেক মাসুদ। বাংলাদেশের প্রথম ভিডিও চলচ্চিত্র সোনার বেড়ি (১৯৮৫), প্রথম অ্যানিমেশন চিত্র ইউনিসন (১৯৯৪) ও প্রথম ডিজিটাল চলচ্চিত্র অন্তর্যাত্রা নির্মাণ করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে স্বল্পকালীন প্রবাসজীবনে যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালক লিয়ার লেভিনের ধারণকৃত ১৯৭১ সালের ফুটেজ ও সংগৃহীত ফুটেজ দিয়ে তিনি নির্মাণ করেন মুক্তির গান, যা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রামাণ্য দলিল হিসেবে বিবেচিত। প্রামাণ্যচিত্রটির জন্য তিনি ১৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্রের পুরস্কার লাভ করেন। তার উল্লেখযোগ্য আরও কয়েকটি চলচ্চিত্র হলো অন্তর্যাত্রা (২০০৬), নরসুন্দর (২০০৯) ও রানওয়ে (২০১০)। তারেক মাসুদ চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের জীবনভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র আদম সুরত (১৯৮৯) নির্মাণের অংশ হিসেবে প্রায় সাত বছর শিল্পীর সান্নিধ্যে কাটান। তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র মাটির ময়নার (২০০২) মাধ্যমে তিনি ২০০২ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবে ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি স্বল্পদৈর্ঘ্য, পূর্ণদৈর্ঘ্য, প্রামাণ্যচিত্র ও অ্যানিমেশন মিলিয়ে মোট ১৬টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তারেক মাসুদ শর্ট ফিল্ম ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। চলচ্চিত্রে তার অবদানের জন্য ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করে। তারেক মাসুদের শেষ অসম্পূর্ণ কাজ ‘কাগজের ফুল’। ছবিটি ভারত বিভাগের গল্প নিয়ে। এর পটভূমি ছিল মাটির ময়নার পূর্ববর্তী পর্ব। চলচ্চিত্রটি নির্মাণ শেষ করার আগেই ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি ও চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হন।
কাজী সালমা সুলতানা