আধুনিক শিল্পকলার অন্যতম সেরা শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন। তিনি এমএফ হুসেন নামে বেশি পরিচিত। তাকে ভারতের পিকাসো বলা হয়। তিনি আবহমান ভারতীয় শিল্প-ঐতিহ্যের সঙ্গে ইউরোপীয় শিল্পশৈলী ‘কিউবিজম’-এর মিলন ঘটান। মকবুল ফিদা হুসেন ১৯১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন বোম্বে প্রেসিডেন্সি এলাকার পান্ধারপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলা থেকেই তার ছবি আঁকার প্রতি তীব্র আগ্রহ দেখা যায়। তিনি যা দেখতেন, তা-ই এঁকে ফেলতেন। ছেলের আগ্রহ দেখে বাবা তাকে ভর্তি করলেন এক আর্ট স্কুলে। ১৯৩৭ সালে তার বাবা চলে এলেন মুম্বাইয়ে। সেখানে ফিদা ভর্তি হলেন জে জে আর্ট স্কুলে। এ স্কুল থেকেই শুরু হলো তার শিল্পীজীবন। তবে প্রয়োজনীয় আঁকার সরঞ্জাম জোগাড়ের জন্য তাকে সিনেমার পোস্টার আঁকা ও সাইনবোর্ড লেখার কাজ করতে হয়। ১৯৬৭ সালে Through the Eyes of a Painter নামে প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তিনি। এ ছাড়া তার পরিচালিত ‘গজগামিনী’ চলচ্চিত্রে জনপ্রিয় অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিত মূল ভূমিকায় অভিনয় করেন। চিত্রকলা ও চলচ্চিত্র ছাড়া তিনি অনেক কবিতাও লিখেছেন। ১৯৫০ সালে তার আঁকা ছবির প্রথম প্রদর্শনী হয়। মকবুল ফিদা হুসেন হিন্দুধর্ম, পুরাণ, ইতিহাস, রাজনীতি, সাহিত্য, ব্যক্তিত্ব ও সমসাময়িক সবকিছু থেকে তার ছবির প্রাণসঞ্চার করেন। তার অসংখ্য চিত্রকলার ভেতর উল্লেখযোগ্য হলো বিটুইন দ্য স্পাইডার অ্যান্ড দ্য ল্যাম্প, বীণা প্লেয়ার, গণেশ, মাদার তেরেসা, মাদার ইন্ডিয়া, দ্য ওরামা প্রভৃতি। মকবুল ফিদা হুসেন ১৯৫৫ সালে পদ্মশ্রী পদক লাভ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি পাবলো পিকাসোর সঙ্গে সাওপাওলো সম্মেলনে অংশ নেন। ১৯৭৩ সালে তিনি পদ্মভূষণ আর ১৯৯১ সালে পদ্মবিভূষণ পুরস্কারে সম্মানিত হন। মকবুল ফিদা হুসেনের সত্তর দশকের দিকের আঁকা কিছু ছবি ১৯৯৬ সালে একটি হিন্দি ম্যাগাজিনে ছাপা হয়। সেসব ছবি নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন তিনি। ২০০৬ সালে তার আঁকা ‘ব্রহ্মপুত্র’ বা ‘মাদার ইন্ডিয়া’ নামের আরেকটি চিত্রকর্ম নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ফলে তিনি ভারত ছাড়েন। ২০১০ সালে তিনি কাতারের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। এরপর তিনি আর জš§ভূমিতে ফেরেননি। ২০১১ সালের ৯ জুন মকবুল ফিদা হুসেন মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা