কিংবদন্তি গীতিকার ও বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং বহুমুখী প্রতিভার একটি অনন্য নাম ড. আবু হেনা মোস্তফা কামালের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৩৬ সালের ১১ মার্চ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার নাগরৌহা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫২ সালে পাবনা জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা, ১৯৫৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (অনার্স), ১৯৫৯ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন। শিক্ষাজীবনে প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি মেধার স্বাক্ষর রাখেন। তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা ‘দি বেঙ্গলি প্রেস অ্যান্ড লিটারারি রাইটিং’ ১৮১৮-১৮৩১ শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৫৯ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে প্রভাষক হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। পরে রাজশাহীর নবাবগঞ্জ কলেজ, রাজশাহী সরকারি কলেজে প্রভাষক, ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬২ সালে তিনি জনসংযোগ পরিদপ্তরে কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল ছাত্রজীবন থেকেই কবিতা লেখা ও গান পরিবেশন শুরু করেন। তার প্রথম কবিতা ‘নওবাহার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কবিতা, গান ছাড়াও প্রবন্ধ লেখা, গবেষণা, টিভিতে উপস্থাপনা এবং সংস্কৃতি অঙ্গনে নিরলস কাজ করে সুনাম অর্জন করেন। গীতিকার, গায়ক, সুবক্তা ও টেলিভিশনের জনপ্রিয় উপস্থাপক হিসেবে সংস্কৃতির প্রায় সর্বক্ষেত্রে তিনি প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। তিনি প্রায় দুই হাজারের মতো গান লিখেছেন। সাময়িক পত্রিকায় সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সরস কলাম লিখেও তিনি প্রশংসিত হন। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পাঁচটিÑ‘আপন যৌবন বৈরী’, ‘যেহেতু জš§ান্ধ’, ‘আক্রান্ত গজল’, গীতিগ্রন্থ; ‘আমি সাগরের নীল’, প্রবন্ধ; ‘শিল্পীর রূপান্তর’, ‘কথা ও কবিতা’। ১৯৯৫ সালে তার দুই শতাধিক গান নিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রকাশ করে গ্রন্থ ‘আমি সাগরের নীল’। সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, সুহƒদ সাহিত্য স্বর্ণপদক, একুশে পদকসহ নানা পদক ও সম্মাননা অর্জন করেন। ১৯৮৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এই সাহিত্য ও সংগীত সাধক মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা
