পূর্ববাংলার মার্কসবাদী আন্দোলনের কর্মী ও সাহিত্যিক সোমেন চন্দের আজ ৭৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৪২ সালের এই দিনে (৮ মার্চ) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে রেলওয়ের কর্মীদের একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেয়া অবস্থায় ঢাকার সূত্রাপুরের সেবাশ্রমের কাছে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন তিনি। সোমেন চন্দ ১৯২০ সালের ২৪ মে তৎকালীন নরসিংদী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। সোমেন চন্দ ১৯৩৭ সালে ঢাকা মিটফোর্ড মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন; কিন্তু খারাপ স্বাস্থ্যের কারণে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি। এ সময় তিনি প্রগতি লেখক সংঘে যোগদান করেন এবং মার্কসবাদী রাজনীতি ও সাহিত্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। বাংলা সাহিত্যে তিনিই প্রথম গণসাহিত্যের ওপর কাজ করেন। ১৯৪১ সালে তিনি প্রগতি লেখক সংঘের সম্পাদক নির্বাচিত হন। তার লেখা সাধারণত প্রগতি লেখক সংঘের সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক সভায় পাঠ করা হতো। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি ‘বন্যা’ উপন্যাসটি লেখেন। ১৯৪০ সালে তার ‘বনস্পতি’ গল্পটি ক্রান্তি পত্রিকায় ছাপা হয়। তার রচিত গল্পগুলোর মধ্যে ইঁদুর, সংকেত, বনস্পতি, দাঙ্গা, সত্যবতীর বিদায়, উৎসব, মুখোশ প্রভৃতি বিখ্যাত। একটি উপন্যাস, ২৮টি গল্প, তিনটি কবিতা, দুটি নাটকসহ তার লেখা চিঠির সংকলনও প্রকাশিত হয়েছে। সোমেন চন্দের নামানুসারে পুরস্কারের প্রবর্তন করে কলকাতার বাংলা একাডেমি। ১৯৪২ সালের ৮ মার্চ বুদ্ধিজীবী ও লেখকরা ঢাকায় ফ্যাসিবাদবিরোধী সম্মেলনের আহ্বান করেন। স্থানীয় জেলা পার্টির অনুরোধে কমরেড বঙ্কিম মুখার্জি ও জ্যোতি বসু সম্মেলনে বক্তা হিসেবে যান। সম্মেলন উপলক্ষে খুবই উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং রাজনৈতিক মহল প্রায় তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এদিন সকালে সোমেন চন্দ আততায়ীর হাতে নিহত হন। তিনিই বাংলার ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ।
কাজী সালমা সুলতানা