ভিয়েতনামের বিপ্লবী গণনায়ক, রাজনীতিবিদ এবং সশস্ত্র বিপ্লবী গেরিলা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ভো নগুয়েন গিয়াপ। তিনি ফ্রান্স ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে হটিয়ে দিতে তিনি সামরিকভাবে ভিয়েতনাম বিজয়ের ক্ষেত্রে স্থপতির মতো ভূমিকা রেখেছেন।
ভো নগুয়েন গিয়াপ ১৯১১ সালের ২৫ আগস্ট উত্তর ভিয়েতনামের কুয়াঙ বিন প্রদেশের আন জা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি সংগ্রামী আবহে বেড়ে ওঠেন। কিশোর বয়সেই ভিয়েতনামের একটি বিপ্লবী দলে যোগ দিয়ে তিনি সমাজতন্ত্রের সৈনিক হয়ে ওঠেন। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সামরিক প্রশিক্ষণ নেননি। কিন্তু তিনি প্রথম সামরিক বিষয়ে পাঠের হাতেখড়ি ছিল হ্যান্ড গ্রেনেডের মেকানিজম বিষয়ে একটি এনসাক্লেপেডিক এন্ট্রি থেকে। গিয়াপ ১৯৩৭ সালে হ্যানয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্রের ওপর লেখাপড়া করেন। একই সঙ্গে তিনি থান লঙ স্কুল নামে একটি স্কুলে শিক্ষকতাও করতেন। সেখানে তিনি ইতিহাস বিষয়ে শিক্ষা দিতেন। তিনি সেখানে ফ্রান্সের ঐতিহাসিক বিপ্লব নিয়ে ছাত্রদের বোঝাতেন। মাও সেতুঙের রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশল নিয়েও তিনি লেখাপড়া করেছেন। তিনি সে সময়ে আন্ডারগ্রাউন্ড জার্নালিস্ট হিসেবেও কাজ করেন। তিনি ফরাসি ভাষা জানতেন।
১৯৩৮ সালে তিনি ইন্দোচীন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে গিয়াপ চীনে গিয়ে কমিউনিস্ট নেতা হো চি মিনের সঙ্গে দেখা করেন। ১৯৪১ সালে সেখানে বিভিন্ন সংগ্রামীদের নিয়ে ‘ভিয়েতমিন’ নামে সংগঠন গড়ে তোলা হয়। এই ভিয়েতমিন সেনারাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দখলদার জাপানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়। এরপর ১৯৫৪ সালে ফরাসি ঔপনিবেশিকদের ‘বিয়েন ফু’ গেরিলা যুদ্ধে পরাজিত করে। কিন্তু ভিয়েতনাম স্বাধীন হয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। দক্ষিণ ভিয়েতনামে কমিউনিস্ট বিদ্রোহ দেখা দিলে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করে। এর ফলে শুরু হয় ১৯৫৪ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি ভিয়েতনাম যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ভিয়েতনামকে নেতৃত্ব দেন জেনারেল গিয়াপ। ১৯৭৩ সালে মার্কিন বাহিনী দক্ষিণ ভিয়েতনাম ছেড়ে চলে যায়। স্বাধীন ভিয়েতনামে ভো নগুয়েন গিয়াপ ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত তাকে ডেপুটি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তার যুদ্ধের অভিজ্ঞতা দিয়ে রচনা করেন গ্রন্থ ‘জনযুদ্ধ ও গনফৌজ’। সৈন্যবাহিনীকে উজ্জীবিত করার সামর্থ্যরে জন্য তার বাহিনীর সৈন্যদের কাছে তিনি অগ্নিগিরি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০১৩ সালের ৪ অক্টোবর জেনারেল গিয়াপ মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা