Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 9:37 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

আধুনিক বিজ্ঞান জগতে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী মেঘনাথ সাহা। আধুনিক জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি গড়ে উঠেছে যে ক’জন মানুষের মৌলিক তত্ত্বের ওপরÑঅধ্যাপক মেঘনাদ সাহা তাদের অন্যতম। তিনি পরমাণু বিজ্ঞান, আয়ন মণ্ডল, পঞ্জিকা সংস্কার, বন্যা প্রতিরোধ ও নদী পরিকল্পনা বিষয়ে গবেষণা করেছেন। অধ্যয়ন গণিত নিয়ে করলেও গবেষণা করেছেন পদার্থবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়েও। তিনি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে তাপীয় আয়নীকরণ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। তার আবিষ্কৃত সাহা আয়নীভবন সমীকরণ নক্ষত্রের রাসায়নিক ও ভৌত ধর্মগুলো ব্যাখ্যা করতে অপরিহার্য। ১৯৫০ সালে নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানে আধুনিক গবেষণার জন্য পশ্চিমবঙ্গে সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স প্রতিষ্ঠা করেন।

মেঘনাথ সাহা ১৮৯৩ সালের ৬ অক্টোবর বর্তমান গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার শেওড়াতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯০৫  সালে  ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র থাকাকালে তিনি স্বদেশি আন্দোলনে জড়িয়ে পড়লে বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। ১৯০৯ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় তিনি পূর্ববঙ্গে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ঢাকা কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে তিনি আইএসসি পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে দুই বছর লেখাপড়া করার পর কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি গণিতে সম্মানসহ স্নাতক এবং ১৯১৫ সালে ফলিত গণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯১৬ সালে কলেজ অব সায়েন্সে তিনি পদার্থ বিজ্ঞান ও মিশ্র গণিতের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯১৯ সালে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি মেঘনাদ প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি লাভ করেন। ১৯২১ সালে মেঘনাদ সাহা বার্লিনে বক্তৃতা দেন; বার্লিনে অবস্থান কালে তিনি বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের সাহচর্যে আসেন।

অধ্যাপক সাহা ১৯২৩ সালে এলাহাবাদে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২৭ সালে তিনি ফ্রান্সের অ্যাস্ট্রনোমিক্যাল সোসাইটির আজীবন সদস্য ও লন্ডন ইনস্টিটিডট অব ফিজিক্সের একজন প্রতিষ্ঠাতা ফেলো হন। তিনি একক ও যৌথভাবে পদার্থ বিজ্ঞানের বহু  গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। ১৯৫১ সালে তিনি ভারতের লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন। মেঘনাথ সাহা কমবেশি ৮০টি মৌলিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কৃতি পরমাণুবিজ্ঞান, আয়নমণ্ডল, পঞ্জিকা সংস্কার, বন্যা প্রতিরোধ ও নদী পরিকল্পনাবিষয়ক গবেষণা ইত্যাদি। ১৯৫৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি দিল্লির পরিকল্পনা কমিশন দপ্তরে যাওয়ার পথে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা