Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 10:34 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

মহান ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য নাম ভাষা মতিন। তার পুরো নাম আবদুল মতিন। আজ তার অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তোলায় তার অবদান অন্যতম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। সেই জনসভায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯৫২ সালে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে তিনি ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। আবদুল মতিন ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের চৌহালি উপজেলার ধুবুলিয়া গ্রামের এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পরে বাবার কর্মজীবনের সুবাদে তার ছেলেবেলা কেটেছে দার্জিলিংয়ে। সেখানে স্কুলজীবন শেষ করে ১৯৪৩ সালে রাজশাহী গভর্মেন্ট কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ও পরে মাস্টার্স পাস করেন। ভাষা আন্দোলনের পর আবদুল মতিন ছাত্র ইউনিয়ন গঠনে ভূমিকা রাখেন এবং পরে সংগঠনটির সভাপতি হন। ১৯৫৪ সালে পাবনা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক হন তিনি। আবদুল মতিনের নেতৃত্বে পাবনা জেলার জনগণ মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকা পালন করেন। আবদুল মতিন মওলানা ভাসানী ‘ন্যাপ’, পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল) ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভূমিকা রাখেন। ১৯৯২ সালে তিনি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। আবদুল মতিন ভাষা আন্দোলন ও গণচীনের উৎপাদন ব্যবস্থা ও আত্মজীবনীমূলক মোট সাতটি গ্রন্থ রচনা করেন। তার উল্লেখযোগ্য রচনাÑ২১ ফেব্রুয়ারি ও ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গে, গণচীনের উৎপাদন ব্যবস্থা ও দায়িত্ব প্রথা, ভাষা ও একুশের আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন কী এবং তাতে কী ছিল, ভাষা আন্দোলন: ইতিহাস ও তাৎপর্য, আবদুল মতিন ও আহমদ রফিক; বাঙালি জাতির উৎস সন্ধান ও ভাষা আন্দোলন, জীবনপথের বাঁকে বাঁকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার দীর্ঘ সময় পরও সর্বস্তরে বাংলা চালু না হওয়ায় ক্ষোভ ছিল ভাষাবীর আবদুল মতিনের। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘যে ভাষার জন্য সংগ্রাম হলো, জীবন দিতে হলো, সেই বাংলা এখনও সর্বস্তরে চালু হয়নি। এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়।’ ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন একুশে পদক, ঢাকার ৪০০ বছর উদ্যাপন উপলক্ষে ঢাকা রতœ সম্মাননা, বাংলা একাডেমি কর্তৃক ফেলোশিপ-সহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তিনি ২০১৪ সালের ৭ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা