স্মরণীয়-বরণীয়

বাঙালি জাতিসত্তা নির্মাণের অন্যতম পথিকৃৎ সাহিত্যবিশারদ, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচয়িতা এবং প্রাচীন বাংলা পুঁথির সংগ্রাহক ও ব্যাখ্যাকার আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের আজ ১৫১তম জন্মবার্ষিকী। ১৭ শতকের কবি আলাওলের পদ্মাবতী ও অন্যান্য কাব্যের পুঁথি উদ্ধার, পুঁথি পরিচিতিসহ তথ্যসমৃদ্ধ বহু প্রবন্ধ তার সাহিত্য গবেষণায় সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান। তিনি ৯টি পুঁথি সম্পাদনা করেন। তার উল্লেখযোগ্য সম্পাদিত পুঁথিগুলোর মধ্যে জ্ঞানসাগর, গোরক্ষ বিজয়, মৃগলব্ধ, সারদা মুকুল ইত্যাদি অন্যতম।  এগুলো পরে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত হয়। আবদুল করিম এগারোটি প্রাচীন বাংলা গ্রন্থ সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। পুঁথি সংগ্রহ ও সম্পাদনা ছাড়াও নানামুখী চিন্তাচেতনামূলক তার প্রায় ৪১২টির মতো মৌলিক প্রবন্ধ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তিনি তার সংগৃহীত মুসলিম কবি রচিত ৫৯৭টি পুঁথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং হিন্দু কবি রচিত ৪৫০টি পুঁথি রাজশাহী বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়ামে দান করেন। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ১৮৭১ সালের ১১ অক্টোবর বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির চট্টগ্রাম জেলার সুচক্রদণ্ডী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলায় বাড়িতেই তিনি আরবি, ফারসি, উর্দু শিক্ষা লাভ করেন। ১৮৯৩ সালে তিনি পটিয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কয়েকটি স্কুলে শিক্ষকতা করার পর তিনি চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের অফিসে চাকরিতে যোগ দেন এবং বিভাগীয় স্কুল পরিদর্শক পদে উন্নীত হন। ১৯৩৪ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। প্রথম জীবনেই তিনি সাহিত্যবিষয়ক নিবন্ধ রচনা শুরু করেন। তার সাহিত্যকর্ম তৎকালীন বিদগ্ধ সমাজের মনোযোগ আকর্ষণ করে। মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যে মুসলমানদের অবদান ছিল তার বিশেষ আগ্রহের বিষয়। সারাজীবন তিনি প্রাচীন বাংলা পাণ্ডুলিপি (পুঁথি) সংগ্রহ করেন। তার সংগৃহীত পুথির সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। এর মধ্যে প্রায় এক হাজার বাঙালি মুসলমানের রচনা। ইসলামাবাদ শিরোনামে তিনি চট্টগ্রামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে একটি গ্রন্থ ও ড. মুহম্মদ এনামুল হকের সঙ্গে, ‘আরাকান রাজসভায় বাঙ্গালা সাহিত্য’ শীর্ষক আরেকটি গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি সৈয়দ এমদাদ আলী প্রকাশিত ও সম্পাদিত ‘নবনূর’ মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন প্রকাশিত ও সম্পাদিত ‘সওগাত’, এয়াকুব আলী চৌধুরী প্রকাশিত ও সম্পাদিত ‘কোহিনূর’, মোহাম্মদ আবদুর রশিদ সিদ্দিকী প্রকাশিত ও সম্পাদিত ‘সাধনা’ এবং ‘পূজারী’ নামের একটি পত্রিকারও  সম্পাদক ছিলেন। তার অসাধারণ সাহিত্যকৃতির স্বীকৃতিস্বরূপ চট্টল ধর্মমণ্ডলী তাকে ‘সাহিত্যবিশারদ’ এবং নদিয়া সাহিত্যসভা ‘সাহিত্যসাগর’ উপাধি দেয়। গবেষণাকর্মে অবদান রাখায় তিনি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন। ‘সাহিত্যবিশারদ’ খেতাবটি তিনি নিজ নামের সঙ্গে ব্যবহার করতেন। ১৯৫৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০