Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 9:13 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা নাটকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার রায় বাহাদুর দীনবন্ধু মিত্রের ১৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি বাস্তবধর্মী সামাজিক নাটক ও প্রহসন লিখে তিনি সর্বাধিক খ্যাতি অর্জন করেন। তার রচিত নীলদর্পণ গল্পের জন্য তিনি পাঠকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি নাটক লিখেছেন সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে, বাংলা নাটকের প্রাথমিক যুগে; যা ছিল অপ্রত্যাশিত। দীনবন্ধু মিত্র ১৮৩০ সালে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার চৌবেরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতৃদত্ত নাম গন্ধর্বনারায়ণ। ছেলেবেলা থেকেই দীনবন্ধু মিত্র বিদ্যোৎসাহী ছিলেন। পিতার অমতে তিনি কলকাতায় পালিয়ে এসে পিতৃব্য নীলমণি মিত্রের আশ্রয়ে থেকে উচ্চশিক্ষা লাভের প্রাণান্ত সংগ্রাম শুরু করেন। কলকাতায় পড়াশোনার খরচ জোগাতে তাকে গৃহভৃত্যের কাজ করতে হয়। কলকাতায় বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় তিনি নিজেই নিজের নাম দীনবন্ধু মিত্র রাখেন। তিনি ১৮৫০ সালে এন্ট্রান্স পাস করে হিন্দু কলেজে (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি কলেজ) ভর্তি হন। ১৮৫১ সালে তিনি উচ্চতর পরীক্ষায় পাস করেন। মেধাবী ও অধ্যবসায়ী দীনবন্ধু মিত্র   শিক্ষার্থী হিসেবে বিদ্যালয় ও কলেজের সব পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। 

১৮৫৫ সালে দীনবন্ধু পাটনায় পোস্টমাস্টার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৮৭১ সালে লুসাই যুদ্ধের সময় সফলভাবে ডাক বিভাগ পরিচালনা করায় ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘রায়বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৮৭২ সালে তিনি ইন্ডিয়ান রেলওয়ের ইন্সপেক্টর পদ লাভ করেন। দীনবন্ধু মিত্র কলেজে পড়ার সময় সাহিত্যিক সম্পাদক ঈশ্বরগুপ্তের সংস্পর্শে ‘সংবাদ প্রভাকর’, ‘সাধুরঞ্জন’ প্রভৃতি পত্রিকায় কবিতা লিখতে শুরু করেন। তার প্রথম রচনা ‘মানব চরিত্র’ নামক কবিতা। তার রচিত কাব্যগ্রন্থ: দ্বাদশ কবিতা ও সুরধুনী কাব্য।

১৮৬০ সালে তিনি বাংলা ভাষায় প্রথম আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিকবিষয়ক নাটক নীলদর্পণ প্রকাশ করেন। নীলদর্পণ তার শ্রেষ্ঠ নাটক ও শ্রেষ্ঠ রচনা। নাটকটি তৎকালীন সমাজে বিশেষ আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং কৃষকদের নীলবিদ্রোহে ইন্ধন জোগায়। মাইকেল মধুসূদন দত্ত নাটকটির ইংরেজি অনুবাদ করেন। এটিই বিদেশি ভাষায় অনূদিত প্রথম বাংলা নাটক। তার দ্বিতীয় নাটক নবীন তপস্বিনী ১৮৬৩ সালে প্রকাশিত হয়। দীনবন্ধু মিত্র রচিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাটক ও প্রহসন: নবীন তপস্বিনী, বিয়ে পাগলা বুড়ো, সধবার একা দশী, লীলাবতী, জামাই বারিক, কমলে কামিনী প্রভৃতি। তিনি ছিলেন সমাজকল্যাণনিষ্ঠ শিল্পী। ১৮৭৩ সালের ১ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা