বরেণ্য অভিনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকেরের আজ ৭৮তম জন্মদিন। তিনি স্বাধীনতা-পরবর্তী মঞ্চনাটকের অন্যতম সংগঠক ও সফল নাট্যনির্দেশক ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে ও নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে তিনি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি হিসেবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটির কর্ণধার ছিলেন। আলী যাকের ১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর তৎকালীন কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার (বর্তমানে জেলা) রতনপুর ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার সরকারি চাকরির সুবাদে তার শৈশব কাটে ফেনী, খুলনা, কুষ্টিয়া ও ঢাকায়। আলী যাকের ১৯৬০ সালে সেন্ট গ্রেগরিজ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক, নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। সব পরীক্ষায় তিনি মেধার স্বাক্ষর রাখেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৭২ সালে তিনি আরণ্যক নাট্যদলের মাধ্যমে প্রথম মঞ্চ নাটকের জগতে প্রবেশ করেন। তার অভিনীত প্রথম মঞ্চনাটক মুনীর চৌধুরীর কবর। পরবর্তী সময় তিনি নাগরিক নাট্যদলে যোগ দেন। আলী যাকের একাধারে মঞ্চনাটক, টেলিভিশন, বেতার নাটক ও চলচ্চিত্রেও অভিনয় করে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি নাটকে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। মৌলিক টিভি নাটক রচনার পাশাপাশি অনেক বিদেশি নাটক তিনি রূপান্তর করেছেন। শৌখিন ফটোগ্রাফার ছিলেন তিনি। ফটোগ্রাফিতে দক্ষতার জন্য তিনি যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফি সোসাইটির স্থায়ী সদস্যপদ পান। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। আলী যাকের সংস্কৃতি ও সমাজের নানা দিক নিয়ে একাধিক বই রচনা করেন। সমসাময়িক বিষয়ে পত্রপত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখতেন। তার অভিনীত মঞ্চ নাটকের মধ্যে কবর, বুড়ো সালিকের ঘাড়ে রো, দেওয়ান গাজীর কিস্সা, সৎ মানুষের খোঁজে, ম্যাকবেথ, নূরলদীনের সারাজীবন, গ্যালিলিও উল্লেখযোগ্য। টেলিভিশন নাটকের মধ্যে ‘বহুব্রীহি’ এবং ‘আজ রবিবার’। এছাড়া নদীর নাম মধুমতী, লালসালুসহ ৪টি চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন। তার সহধর্মিণী সারা যাকেরও একজন খ্যাতিমান অভিনেত্রী। আলী যাকের একুশে পদক ছাড়াও শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদক এবং মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন। ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা
