উপমহাদেশের গণসংস্কৃতি আন্দোলনের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস। হেমাঙ্গ বিশ্বাস ১৯১২ সালের ১৪ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশী ইউনিয়নের পশ্চিম মিরাশী গ্রামের জমিদার পরিবারে জš§গ্রহণ করেন। শৈশবে স্কুলে যাওয়ার পথে গান গেয়ে গেয়ে স্কুলে যেতেন, তবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গান শেখা তার হয়নি। মুরারীচাঁদ কলেজে পড়ার সময় তিনি জড়িয়ে পড়েন স্বদেশি আন্দোলনে। সে কারণে তাকে কারাভোগ করা ছাড়াও বহিষ্কৃত হতে হয় কলেজ থেকে। ১৯৩২ সালে আবার তিনি গ্রেপ্তার হন। তখন তিনি মারাত্মক যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হন। সেসময় বন্ড দিয়ে জেলমুক্তির রাষ্ট্রীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে ব্রিটিশ সরকার তাকে মুক্তি দেয়। জেলে থাকা সময়ে কংগ্রেসের অহিংস নীতির প্রতি আস্থা-বিশ্বাস হারিয়ে তিনি মার্কসবাদী রাজনীতির প্রতি ঝুঁকে পড়েন। ১৯৩৯ সালে কংগ্রেস সভাপতি সুভাষ বোস হবিগঞ্জে এলে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। সংবর্ধনাপত্র পাঠ করেন হেমাঙ্গ বিশ্বাস। কমিউনিস্ট মতাদর্শের কারণে জমিদার বাবা তাকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করলে তিনি চলে যান শিলঙয়ে। হেমাঙ্গ বিশ্বাস চা বাগানের শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলন এবং ডিকবয় তেল কোম্পানির শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে সংঘটিত আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৪২ সালে তিনি প্রগতিশীল লেখক-শিল্পীদের আমন্ত্রণে প্রথম কলকাতার একটি অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন। ১৯৪৬ সালে আসাম প্রদেশ গণনাট্য সংঘ গঠিত হলে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং পর পর তিনবার ওই পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। হেমাঙ্গ বিশ্বাস ১৯৬৯ সালে নকশাল বাড়ি আন্দোলনের প্রতি তিনি প্রকাশ্যে সমর্থন দেন। ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষা-আন্দোলনের সময় হেমাঙ্গ বিশ্বাস রচনা করেন ‘শোনো এক আচানক কাহিনি’। রাজনৈতিক কারণে তাকে অনেকবার গ্রেপ্তার ও কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী গণসংগীতশিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গ্রামের বাড়িতে বোমাবর্ষণ করে। জীবনের শেষ দিকে হেমাঙ্গ বিশ্বাস ‘সিঙ্গার্স’ নামে একটি গানের দল করে গ্রামে গ্রামে গান গেয়ে বেড়াতেন। তিনি অর্ধশতাধিক নাটকে সংগীত পরিচালক ছিলেন। বাংলা ও আসাম ভাষায় তিনি অনেক গ্রন্থ রচনা করেন। তার রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থÑশঙ্খচিলের গান, জন হেনরীর গান, সেলাম চাচা, মশাল জ্বালো, মাউন্টব্যাটেন মঙ্গলকাব্য প্রভৃতি। ১৯৮৭ সালের ২২ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
-কাজী সালমা সুলতানা