স্মরণীয়-বরণীয়

সত্তর দশকের তরুণ বহেমিয়ান কবি ত্রিদিব দস্তিদারের আজ ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি সাহিত্য সাধনার পাশাপাশি রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন। তিনি ১৯৫২ সালের ৩১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। তার পিতামহ রায় বাহাদুর দুর্গাদাস দস্তিদার ছিলেন মাস্টারদা সূর্যসেনের সহযোদ্ধা এবং চট্টগ্রামের প্রখ্যাত আইনজীবী। ত্রিদিব ১৯৬৮ সালে পটিয়ার কেলিশহর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। চট্টগ্রাম সিটি কলেজে পড়াকালে তিনি ছাত্র-রাজনীতিতে যুক্ত হন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রামে সামনের সারিতে ত্রিদিব দস্তিদার সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ’৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে। ১৯৭২ সালে চট্টগ্রামের দৈনিক ‘আন্দোলন’ পত্রিকায় তার প্রথম কবিতার প্রকাশ হয়। স্বাধীনতা-উত্তর মুক্তিযুদ্ধের কবিতা ও ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের পর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তার প্রতিবাদী কবিতা লেখেন। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর কবিতা লেখার কারণে সেই সময় তিনি নির্যাতিত হন। কবি হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় প্রকাশিত ১৬ খণ্ডের ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র’ (১৯৮২-১৯৮৩) প্রকল্পে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তার পেশাজীবনের সূচনা। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যুদ্ধাপরাধীরা মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়ায় তিনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কোনো সনদ গ্রহণ করেনি। মৃত্যুর আগে এক সভায় তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, যে মন্ত্রিসভায় যুদ্ধাপরাধীরা রয়েছে, সেই সময়ে আমার মৃত্যু হলে যেন জাতীয় পতাকা দিয়ে আমার কফিন মোড়া না হয়। তিনি দৈনিক জনতার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া মুদ্রণ-ব্যবসা ও ‘অক্ষর’ নামে সাহিত্যপত্র সম্পাদনা করেন। তার ৩০ বছরের কাব্যচর্চার জীবনে  প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ মাত্র ৫টিÑগৃহপালিত পদ্যেরা, অঙ্গে আমার বহুবর্ণের দাগ, ভালোবাসতে বাসতে ফতুর করে দেবো, ভালোবাসার শাদা ছড়ি ও পেড়াবো তাজমহল। ত্রিদিব দস্তিদার ২০০৪ সালের ২৫ নভেম্বর  মৃত্যুবরণ করেন।

-কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০