প্রখ্যাত জনহিতৈষী হাজী মুহম্মদ মুহসীনের আজ ২১০তম মৃত্যুবার্ষিকী। দানশীলতার মহৎ গুণাবলির জন্য তিনি দানবীর খেতাব লাভ করেন। মুহম্মদ মুহসীন ১৭৩২ সালের ৩ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে জš§গ্রহণ করেন। তার পূর্ব পুরুষরা অত্যন্ত ধনী ছিলেন। ইরান থেকে বাংলায় আসা তার বাবা হাজী ফয়জুল্লাহ ছিলেন একজন ধনী জায়গিরদার। মাতা জয়নব খানমেরও হুগলি, যশোর, মুর্শিদাবাদ ও নদীয়ায় বিস্তর জমি ছিল। তার বোন মন্নুজানের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী হিসেবে মুহসীন বোনের সম্পত্তির মালিক হন। প্রাথমিক পর্যায়ে হাজী মুহসীন গৃহশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে আরবি ও ফারসি ভাষায় শিক্ষার্জন করেছেন। পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষার জন্য রাজধানী মুর্শিদাবাদে তার শিক্ষা শেষ করেন। শিক্ষাজীবন শেষে ১৭৬৭ সালে তিনি দেশ ভ্রমণে বের হন। মক্কা, মদিনা, কুফা, কারবালাসহ ইরান, ইরাক, আরব, তুরস্ক এমন নানা স্থান সফর করে দীর্ঘ ২৭ বছর পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পর তিনি তার বিধবা বোনের সম্পদ দেখাশোনা শুরু করেন।
১৮০৩ সালে মন্নুজানের মৃত্যুর পর মুহসীন তার উত্তরাধিকারী হিসেবে অঢেল সম্পদের মালিক হন। হাজী মুহসীন ছিলেন খুব ধার্মিক ও নিরহঙ্কারী। তিনি সহজ সরল জীবনযাপন করতেন। তিনি ছিলেন চিরকুমার। তিনি তার প্রতিষ্ঠিত ইমামবাড়া প্রাসাদে বাস করতেন না। ইমামবাড়ার পাশে একটি ছোট কুটিরে বাস করতেন। আর কুরআন শরীফ নকল করে যা পেতেন তা দিয়েই চলতেন। নিজ হাতে রান্না করে অধীনস্তদের নিয়ে বসে খেতেন। শিক্ষানুরাগী এ দানবীর তার অর্থ দিয়ে বহু বিদ্যাপীঠ স্থাপন করে গেছেন। হুগলিতে ‘হুগলি মুহসীন কলেজ’ ও ‘চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মুহম্মদ মুহসীন কলেজ’ প্রতিষ্ঠার সময় মুহসীনের ওয়াকফকৃত অর্থ ব্যবহƒত হয়। তার পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠে দৌলতপুর মুহসীন মাধ্যমিক বিদ্যালয়’। ১৭৬৯-৭০ সালের সরকারি দলিল অনুযায়ী তৎকালীন দুর্ভিক্ষের সময় তিনি অনেক লঙ্গরখানা স্থাপন করেন এবং সরকারি তহবিলে অর্থ সহায়তা প্রদান করেন। ১৮০৬ সালে তিনি ‘মুহসীন ফান্ড’ নামক তহবিল প্রতিষ্ঠা করেন। এ তহবিল শিক্ষা, ধর্মীয় কর্মকাণ্ড, পেনশন, বৃত্তি ও দাতব্য কর্মকাণ্ডের জন্য বরাদ্দ করা হয়। ১৮১২ সালে ২৯ নভেম্বর এ ধার্মিক দানবীর হুগলিতে ইন্তেকাল করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলের নাম তার স্মরণে রাখা হয়েছে। ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাঁটির নাম বিএনএস হাজী মুহসীন।
-কাজী সালমা সুলতানা