Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:57 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

নারী জাগরণ ও নারীর অধিকার আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বেগম রোকেয়া নামেই সমধিক পরিচিত। রোকেয়া ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার পায়রাবন্দ ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। রোকেয়া যে সামাজিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠেন, সেখানে মুসলমান মেয়েদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের কোনো সুযোগ ছিল না।  পাঁচ বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে কলকাতায় বসবাস করার সময় তিনি কিছুদিন লেখাপড়ার সুযোগ পান। ১৮৯৮ সালে রোকেয়ার বিয়ে হয় সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে। এরপর স্বামীর সাহচর্যে ও উৎসাহে রোকেয়ার জ্ঞানচর্চার পরিধি বিস্তৃত হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর ১৯০৯ সালের ১ অক্টোবর স্বামীর প্রদত্ত অর্থে পাঁচজন ছাত্রী নিয়ে তিনি ভাগলপুরে ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস’ স্কুল স্থাপন করেন। কিন্তু পারিবারিক কারণে রোকেয়া ভাগলপুর ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন। ১৯১১ সালে মাত্র আটজন ছাত্রী নিয়ে তিনি নবপর্যায়ে ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৭ সালে এই স্কুল মধ্য ইংরেজি গার্লস স্কুলে এবং ১৯৩১ সালে উচ্চ ইংরেজি গার্লস স্কুলে রূপান্তরিত হয়। প্রায় দুই যুগ ধরে বেগম রোকেয়া তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করেন এই স্কুল পরিচালনায়। তার আবেদনের ফলেই ১৯১৯ সালে কলকাতায় ‘মুসলিম মহিলা ট্রেনিং স্কুল’ স্থাপন করা হয়। শিক্ষা ব্যতীত নারীজাতির অগ্রগতি ও মুক্তি সম্ভব নয়, এ সত্য অনুধাবন করেই তিনি নারীশিক্ষা প্রসারের কাজে ব্রতী হন। ১৯০২ সালে ‘পিপাসা’ নামক একটি বাংলা গদ্য রচনার মধ্য দিয়ে সাহিত্যজীবনে পা রাখেন তিনি। বেগম রোকেয়া নবনূর, সওগাত, মোহাম্মদী, নবপ্রভা, মহিলা, ভারতমহিলা, আল-এসলাম, নওরোজ, মাহে নও, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকাসহ অনেক পত্রিকায় নিয়মিত লিখেছেন। সমকালীন সাময়িক পত্রে মিসেস আরএস হোসেন নামে তার রচনা প্রকাশিত হয়। রোকেয়ার সমগ্র সাহিত্যকর্মের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে সমাজের কুসংস্কার ও অবরোধ প্রথার কুফল, নারীশিক্ষা, নারীর অধিকার ও নারী জাগরণ সম্পর্কে তার প্রাগ্রসর ধ্যানধারণা। রোকেয়ার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ মতিচুর, সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী প্রভৃতি। এছাড়া তিনি অসংখ্য প্রবন্ধ, ছোটগল্প, কবিতা, ব্যঙ্গাত্মক রচনা ও অনুবাদ রচনা করেন। তিনি ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। দিবসটি রোকেয়া দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

কাজী সালমা সুলতানা