Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 3:14 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিনের ৫১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বিজয়ের মাত্র ছয় দিন আগে ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর খুলনার রূপসা নদীতে রণতরী পলাশে যুদ্ধরত অবস্থায় পাক বাহিনীর জঙ্গি বিমান থেকে বর্ষিত গোলার আঘাতে শহিদ হন তিনি। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত হন। মোহাম্মদ রুহুল আমিন ১৯৩৫ সালের জুন মাসে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার বাগ আচড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৯ সালে সোনাইমুড়ী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগ দিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে করাচি যান। প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৫৩ সালে জুনিয়র মেকানিক্যাল হিসেবে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগ দেন। প্রাথমিক প্রশিক্ষণের জন্য করাচির অদূরে মানোরা দ্বীপে পিএনএস কারসাজে (নৌবাহিনীর কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) যোগ দেন।

১৯৫৮ সালে তিনি পেশাগত প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন এবং ১৯৬৫ সালে মেকানিক্যাল কোর্সের জন্য নির্বাচিত হন। সফলভাবে কোর্স সমাপ্তির পর তিনি ইঞ্জিন রুম আর্টিফিশার হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৬৮ সালে তিনি চট্টগ্রামে পিএনএস বখতিয়ার নৌঘাঁটিতে বদলি হন। একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি নৌঘাঁটি থেকে পালিয়ে এপ্রিল মাসে ত্রিপুরা যান এবং দুই নম্বর সেক্টরে যোগদান করেন। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। ভারত সরকার বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দুটি টাগবোট উপহার দেয়। এগুলোকে বাফার গান ও মাইন-পড জুড়ে গানবোটে রূপান্তর করার পর নামকরণ হয় ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’। রুহুল আমিন নিয়োগ পান পলাশের ইঞ্জিন রুম আর্টিফিশার হিসেবে। একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর মংলা বন্দরে পাকিস্তানি নৌঘাঁটি পিএনএস তিতুমীর দখলের উদ্দেশ্যে পদ্মা, পলাশ, মিত্রবাহিনীর গানবোট পানভেল ও ভারতের বিএসএফের পেট্রোল ক্রাফট চিত্রাঙ্গদা একযোগে রওনা হয়। ১০ ডিসেম্বর মংলা অতিক্রম করে পদ্মা ও পলাশ সামনে অগ্রসর হতে থাকে। দুপুরে আকাশে তিনটি জঙ্গি বিমান দেখা যায়। পদ্মা ও পলাশ থেকে বিমানের ওপর গুলিবর্ষণ করার অনুমতি চাইলে বহরের কমান্ডার বিমানগুলো ভারতীয় বলে ভুল করে। কিন্তু আকস্মিকভাবে বিমানগুলো পদ্মা ও পলাশের ওপর গুলি ও বোমা বর্ষণ করে। শত্রুর একটি গোলায় পলাশ ধ্বংস হয়ে যায় এবং রুহুল আমিন আহত হন। আহত অবস্থায় রাজাকারদের হাতে তিনি ধরা পড়েন। রাজাকাররা  আহত এই বীর সৈনিককে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।

কাজী সালমা সুলতানা