সাংবাদিক, সম্পাদক, কলাম লেখক ও রাজনীতিবিদ জহুর হোসেন চৌধুরীর ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯২২ সালের ৭ জুন ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার রামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। হাবীবুল্লাহ বাহার সম্পাদিত ‘বুলবুল’ পত্রিকার মাধ্যমে জহুর হোসেন চৌধুরীর সাংবাদিকতা জীবন শুরু। ১৯৪৫ সাল থেকে তিনি শিক্ষানবিশ, সম্পাদক ও সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘দ্য স্টেটসম্যান’, ‘কমরেড’ ও ‘স্টার অফ ইন্ডিয়া’ পত্রিকায়। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তিনি সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। সরকারি কয়েকটি পেশা বদল শেষে তিনি আবার সাংবাদিকতায় ফিরে আসেন। তার সাংবাদিক জীবনের দ্বিতীয় পর্যায়ে ‘উপাত্ত’ ও ‘পাকিস্তান অবজারভার’ পত্রিকায় কিছুকাল কাজ করার পর ১৯৫১ সালে দৈনিক সংবাদে সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৪ সালে তিনি এই পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ‘সংবাদ’ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকা পর্যন্ত তিনি এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে সংবাদ-এর ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তৎকালীন সামরিক শাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সংবাদ নির্ভীক খবর পরিবেশন ও আন্দোলনের দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছে। যার কারণে মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনী ঢাকার বংশালের সংবাদ অফিস পুড়িয়ে দেয়। দেশ স্বাধীন হলে তিনি ‘কাউন্টার পয়েন্ট’ নামে একটি ইংরেজি সাময়িকী সম্পাদনা করেন। আজীবন তিনি দৈনিক সংবাদের অন্যতম পরিচালক ছিলেন। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত তিনি এই পত্রিকায় সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। জহুর হোসেন চৌধুরী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, অসাম্প্রদায়িকতা আর মানবতাবিরোধী সব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে ক্রমাগত লিখেছেন। স্বাধীনতার পর সংবাদে প্রকাশিত ‘দরবারে জহুর’ শিরোনামে নিয়মিত কলাম তাকে বিপুল জনপ্রিয়তা এনে দেয়। তিনি পূর্ব পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটি এবং পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন ও প্রেস ক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। এ ছাড়া প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন ও পূর্ব পাকিস্তান প্রেস ক্লাবেরও তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮১ সালে তিনি ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। দৈনিক সংবাদ তার স্মরণে প্রবর্তন করেছে ‘জহুর হোসেন স্মৃতিপদক’। ১৯৮০ সালের ১১ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা