বাংলা সাহিত্য সমালোচক, বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, দার্শনিক আবু সয়ীদ আইয়ুব। তিনি বাংলা ভাষায় আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ গ্রন্থ রচনা করে ১৯৭০ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশিকোত্তম উপাধি লাভ করেন।
আবু সয়ীদ আইয়ুব ১৯০৬ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শৈশবের কিছুকাল সিলেটে অতিবাহিত করেন। মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি কলকাতার সেন্ট এন্টনিজ স্কুল থেকে প্রবেশিকা এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। পরে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে পদার্থবিদ্যায় অনার্স ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ বিষয়ে আগ্রহী হন এবং এডিংটনের গধঃযবসধঃরপধষ ঞযবড়ৎু ড়ভ জবষধঃরারঃু-র ওপর অধ্যয়ন করেন; কিন্তু অসুস্থতার কারণে এমএসসি পরীক্ষা না দিয়ে দর্শনে এম এ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি ঈড়হঃবহঃ ড়ভ ঊৎৎড়ৎ রহ চবৎপবঢ়ঃরড়হ ধহফ ঞযড়ঁমযঃ বিষয়ে গবেষণা করেন। আবু সয়ীদ আইয়ুব প্রেসিডেন্সি ও কৃষ্ণনগর কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বভারতীতেও অধ্যাপনা করেন। ১৯৫৪-৫৬ সালে তাকে রকফেলার ফাউন্ডেশনের ফেলো নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬১ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপার্টমেন্ট অব ইন্ডিয়ান স্টাডিজ খোলা হলে তিনি এর প্রথম বিভাগীয় প্রধান নিযুক্ত হন। এরপর তিনি ১৯৬৯-৭১ সাল পর্যন্ত সিমলার ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজে ফেলোরূপে কর্মরত ছিলেন।
তিরিশের দশক থেকে তিনি পরিচয় ও চতুরঙ্গ পত্রিকায় প্রবন্ধ লেখা শুরু করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার সমর্থন এবং বুদ্ধিজীবীদের তিনি সহায়তা করেন। তিনি জীবনের দীর্ঘসময়জুড়ে রবীন্দ্ররচনা অধ্যয়ন ও তার সার্থক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেন। আবু সয়ীদ আইয়ুবের প্রথম বাংলা প্রবন্ধ ‘বুদ্ধিবিভ্রাট ও অপরোক্ষানুভূতি’ ত্রৈমাসিক পরিচয় পত্রিকায় প্রকাশিত হলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, প্রমথ চৌধুরী ও অতুলচন্দ্র গুপ্ত তার লেখার প্রশংসা করেন। আবু সয়ীদ আইয়ুবের আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ (১৯৬৮) গ্রন্থটি কলকাতার সাহিত্য-জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তার প্রকাশিত প্রবন্ধ চারটি। আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ, পান্থজনের সখা, পথের শেষ কথা এবং ব্যক্তিগত ও নৈর্ব্যত্তিক। আবু সয়ীদ আইয়ুব ১৯৬৯ সালে ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’, ১৯৭০ সালে দিল্লির ‘সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার’ এবং ১৯৭১ সালে বিশ্বভারতীর ‘দেশিকোত্তম’ উপাধি লাভ করেন। ১৯৮০ সালে টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাকে ‘রবীন্দ্র তত্ত্বনিধি’ উপাধি প্রদান করে। তিনি ১৯৮২ সালের ২১ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা