স্মরণীয়-বরণীয়

বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী শহিদ মুক্তিযোদ্ধা সুরকার, ভাষাসৈনিক শহিদ আলতাফ মাহমুদের আজ ৮৯তম জন্মবার্ষিকী। ভাষাশহিদদের নিয়ে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রচিত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি তারই সুরারোপে অমর হয়ে ওঠে। মহান মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি দেশাত্মবোধক গান রচনা ও পরিবেশনা করে  স্বাধীনতাকামী জনগণকে গভীরভাবে উদ্বুদ্ধ করেন। আলতাফ মাহমুদ ১৯৩৩ সালে ২৩ ডিসেম্বর বরিশালের মুলাদী উপজেলার পাতারচর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম এ এন এম আলতাফ আলী। তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সূচনা হয় গ্রামের স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলে। তিনি বরিশাল জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, বিএম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এরপর চিত্রকলায় পড়তে যান তিনি কলকাতা আর্ট স্কুলে। সেখানেই তার রাজনীতি সচেতন হয়ে ওঠা ।

আলতাফ মাহমুদ ১৯৫০ সালে ঢাকায় ফিরে ধূমকেতু শিল্পী সংঘে যোগ দেন। ভাষা আন্দোলনকালে তিনি গণজাগরণমূলক অসংখ্য গণসংগীত পরিবেশন করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি ‘ভিয়েনা শান্তি সম্মেলনে’ যোগ দিতে আমন্ত্রণ পান। কিন্তু পাকিস্তান সরকার তার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করায় সম্মেলনে যোগ দিতে পারেননি। তিনি ঢাকায় না ফিরে করাচিতেই থেকে যান।

বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই আলতাফ মাহমুদ গান গাইতে শুরু করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি করাচি বেতারে প্রথম সংগীত পরিবেশন করেন। ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত আলতাফ মাহমুদ করাচিতেই অবস্থান করেন এবং ওস্তাদ আবদুল কাদের খাঁর কাছে উচ্চাঙ্গসংগীতে তালিম নেন। তিনি সংগীত পরিচালক দেবু ভট্টাচার্যের সঙ্গে কাজ করেন এবং ঢাকায় ফিরে ১৯৬৫ সালে তিনি চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা শুরু করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের ৩৭০ আউটার সার্কুলার রোডের বাসা হয়ে উঠে মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম গোপন ক্যাম্প। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থও সংগ্রহ শুরু করেন আলতাফ মাহমুদ। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চ লাইট শুরু হলে তিনি ঢাকায় থেকে যান। তিনি ২নং সেক্টরের ‘ক্র্যাক প্লাটুন’-এর সদস্য ছিলেন। এপ্রিলের শেষে প্রচুর গণসংগীত রচনা, সুরারোপ ও কণ্ঠ রেকর্ড করে স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্রে পাঠাতে শুরু করেন। এ সময় রাজারবাগের বাসায় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের গোলা-বারুদ ও অস্ত্র লুকিয়ে রাখতেন।

১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যরা ঢাকার বাসা থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায়। ধারণা করা হয় যে, পূর্বসংবাদের সূত্রেই তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। অমানুষিক নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু তার মরদেহের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

সংস্কৃতি চর্চা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ১৯৭৭ সালে তিনি মরণোত্তর ‘একুশে পদক’-এ ভূষিত হন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০