প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলমগীর কবিরের ৮৪তম জন্মদিন আজ। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে ভিন্নধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণ করে তিনি আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ১৯৮০ সালে তিনি বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের সঙ্গে যৌথভাবে একটি ফিল্ম ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। তার তিনটি চলচ্চিত্র ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশের সেরা ১০ চলচ্চিত্র তালিকায় স্থান পেয়েছে।
আলমগীর কবিরের জন্ম ১৯৩৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে। তার পৈতৃক নিবাস বরিশালের বানারিপাড়া উপজেলায়। পিতার চাকরিসূত্রে হুগলীতে থাকায় তিনি হুগলী কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। দেশভাগের পর পর তিনি বাবা-মায়ের সঙ্গে চলে আসেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। ভর্তি হন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পরে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন।
কবিরের সাংবাদিকতা শুরু হয় লন্ডনের ডেইলি ওয়ার্কার নামে একটি বামপন্থি পত্রিকায়। ১৯৬৪ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র বিষয়ে কয়েকটি কোর্স সম্পন্ন করেই কবির জড়িয়ে পড়েন ‘ইস্ট বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্ট’ নামে একটি র্যাডিক্যাল সংগঠনের সঙ্গে। তিনি কিউবায় যান এবং গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। এ সময়ে তিনি ফিদেল ক্যাস্ত্রোর সাক্ষাৎকারও গ্রহণ করেন। পরে তিনি ফিলিস্তিন ও আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেন।
১৯৬৬ সালে দেশে ফিরলে বামপন্থি আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে আলমগীর কবির গ্রেপ্তার ও কারাবরণ করেন। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি পুরোপুরি সাংবাদিকতা শুরু করেন। তিনি ‘পাকিস্তান অবজার্ভার’ ও ‘হলিডে’ পত্রিকায় কাজ করেন। এরপর ‘দ্য এক্সপ্রেস’ নামে নিজেই একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ইংরেজি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় আহমেদ চৌধুরী ছদ্মনামে তিনি ইংরেজিতে সংবাদ পাঠ করতেন।
স্বাধীনতার পর আলমগীর কবির পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। তার প্রথম কাহিনিচিত্র ‘ধীরে বহে মেঘনা’। এর পর ‘সূর্য কন্যা’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘রূপালী সৈকত’, ‘মোহনা’, ‘মহানায়ক’, ‘পরিণীতা’ ছাড়াও নয়টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন। তিনি ২০১০ সালে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’-এ ভূষিত হন।
১৯৮৯ সালের ২০ জানুয়ারি আলমগীর কবির চলচ্চিত্রবিষয়ক একটি অনুষ্ঠান শেষে ঢাকায় ফেরার পথে নগরবাড়ি ফেরি ঘাটে
এক দুর্ঘটনায় নিহত হন।
কাজী সালমা সুলতানা