প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক রিজিয়া রহমানের আজ ৮৩তম জন্ম বার্ষিকী। উপন্যাসে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদকে ভূষিত হন। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘ঘর ভাঙা ঘর’, ‘উত্তর পুরুষ’, ‘রক্তের অক্ষর’, ‘বং থেকে বাংলা’ ইত্যাদি।
রিজিয়া রহমান ১৯৩৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভারতের কলকাতার ভবানীপুরে মুসলিম সাংস্কৃতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পারিবারিক নাম ছিল জোনাকী। তার বাবার চাকরির কারণে তাদের ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকতে হয়। ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের পর সপরিবারে তারা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। ফরিদপুরে তার প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু হয়। ১৯৫২ সালে তারা ঢাকার শাইনপুকুরে নানার বাড়িতে চলে আসেন। তিনি ইডেন মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, ১৯৬৫ সালে স্নাতক ও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
রিজিয়া রহমান ছোটবেলায় শখের বশে কবিতা লিখতেন। ১৯৫০ সালে তিনি যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়েন, তখন তার লেখা গল্প ‘টারজান’, ‘সত্যযুগ’ পত্রিকায় ছাপা হয়। ১৯৬০ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে তার লেখা গল্প এবং দৈনিক সংবাদে কবিতা ছাপা হয়। ১৯৬৭ সালে ইত্তেফাকে তিনি ‘লাল টিলার আকাশ’ নামক গল্প লিখেন। পরে ‘ললনা’ পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লেখা শুরু করেন। সাহিত্য পত্রিকা ‘ত্রিভুজ’-এর সম্পাদক হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি জাতীয় জাদুঘরের পরিচালনা বোর্ডের ট্রাস্টি ও জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের কার্য পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া বাংলা একাডেমির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত হয় রিজিয়া রহমানের প্রথম উপন্যাস ‘উত্তর পুরুষ’। এরপর রচনা করেন নীল বিদ্রোহের পরবর্তী সময়ে খুলনা অঞ্চলের এক বিপ্লবী রহিমউল্লাহর ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার বীরত্বগাথা ‘অলিখিত উপাখ্যান’ (১৯৮০)। ১৯৫৮ সালে বেলুচিস্তান বিদ্রোহের পটভূমিতে তিনি রচনা করেন ‘শিলায় শিলায় আগুন’ (১৯৮০)। ২০০৪ সালে রচনা করেন ‘বাঘবন্দি’ উপন্যাস; এই উপন্যাসে তিনি তুলে ধরেছেন বঞ্চনা থেকে মুক্তি আবশ্যকতা। ‘অভিবাসী আমি’ তার আত্মজীবনীমূলক প্রথম গ্রন্থ। তার দ্বিতীয় আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘বই নদী নিরবধি’। এছাড়া ২০১১ সালে প্রকাশিত হয় গল্পগ্রন্থ ‘চার দশকের গল্প।’ তিনি চারটি গল্পগ্রন্থ, ৩২টি উপন্যাস, কবিতা, দুটি অনুবাদ, দুটি আত্মজীবনী, দুটি রম্যরচনা ও চারটি শিশুসাহিত্য রচনা করেছেন। তিনি ২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা