Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 3:38 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

আধুনিক বাংলাসাহিত্যের শক্তিশালী কথাশিল্পী শওকত ওসমানের ১০৬তম জনবার্ষিকী আজ। সমাজের সব জঞ্জাল, অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সদা সোচ্চার। তিনি বলতেন সত্য আর সুন্দরের কথা। তাই তাকে বলা যায় পূর্ণ সমাজ সংস্কারক। শওকত ওসমান একাধারে নাটক, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, রম্যরচনা, রাজনৈতিক লেখা ও শিশু-কিশোর সাহিত্য রচনা করেছেন। তার রচিত মোট উপন্যাসের সংখ্যা ১৫টি। এগুলো হলোÑবনী আদম, জননী (১৯৫৮), ক্রীতদাসের হাসি (১৯৬২), সমাগম (১৯৬৭), চৌরসন্ধি (১৯৬৮), রাজা উপাখ্যান (১৯৭১), জাহান্নাম হইতে বিদায় (১৯৭১), দুই সৈনিক (১৯৭৩), নেকড়ে অরণ্য (১৯৭৩), পতঙ্গ পিঞ্জর (১৯৮৩), আর্তনাদ (১৯৮৫), জলাঙ্গী (১৯৮৬), রাজপুরুষ (১৯৯২), রাজসাক্ষী, বেড়ি। শওকত ওসমান ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সবলসিংহপুর গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম শেখ আজিজুর রহমান। ‘শওকত ওসমান’ তার সাহিত্যিক নাম।তিনি কলকাতার আলিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়া শুরু করলেও পরে  সেন্টজেভিয়ার্স কলেজ থেকে আইএ ও ১৯৩৯ সালে বিএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪১ সালে বাংলায় এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। আইএ পাস করার পর শওকত ওসমান কিছুদিন কলকাতা করপোরেশন এবং বাংলা সরকারের তথ্য বিভাগে চাকরি করেন। চাকরি জীবনের প্রথমদিকে তিনি কিছুদিন ‘কৃষক’ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। ১৯৪১ সালে তিনি গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজে প্রভাষক পদে নিযুক্ত হন। ১৯৪৭ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজ অব কমার্সে যোগ দেন এবং ১৯৫৯ সালে তিনি ঢাকা কলেজে অধ্যাপনা শুরু করে ১৯৭২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে যান। শওকত ওসমানের উপন্যাস ও গল্প রচনা ছাড়াও বিদেশি ভাষার উপন্যাস, ছোটগল্প ও নাটককে বাংলায় অনুবাদ করেছেন। প্রয়াত হুমায়ুন আজাদ তাকে বলতেন ‘অগ্রবর্তী আধুনিক মানুষ’। শওকত ওসমানের জননী ও ক্রীতদাসের হাসি উপন্যাস দুটি প্রশংসিত হয়েছে। জননীতে সামাজিক জীবন ও ক্রীতদাসের হাসিতে রাজনৈতিক জীবনের কিছু অন্ধকার দিক উম্মোচিত হয়েছে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত নেকড়ে অরণ্য গ্রন্থে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলার নরনারীর নির্যাতনের করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। শওকত ওসমান সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি, আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, পাকিস্তান সরকারের প্রেসিডেন্ট পুরস্কার, মাহবুবউল্লাহ ফাউন্ডেশন পুরস্কার, মুক্তধারা সাহিত্য পুরস্কার এবং স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি ১৯৯৮ সালের ১৪ মে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা