ঊনবিংশ শতাব্দীর শিক্ষাব্রতী ও জনহিতৈষী হাজি মুহম্মদ মুহসীনের ২৯১তম জন্ম বার্ষিকী আজ। তিনি সব সম্প্রদায়ের কাছে শ্রদ্ধার মানুষ। ধর্ম বর্ণ নির্বেশেষে সবার শিক্ষা ও মানব কল্যাণে তিনি তার সব সম্পদ বিলিয়ে দিয়েছেন। এ কারণে সাধারণ মানুষ তাকে দানবীর খেতাব দিয়েছেন । মুহম্মদ মুহসীন ১৭৩২ সালের ৩ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে জš§গ্রহণ করেন। তার পূর্ব পুরুষরা অত্যন্ত ধনী ছিলেন। তার মাতা জয়নব খানমেরও হুগলি, যশোর, মুর্শিদাবাদ ও নদীয়ায় প্রচুর জমি ছিল। মুহম্মদ মুহসীন ও বোন মুন্নুজান শৈশবে একই গৃহ শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্জন শুরু করেন। পরে উচ্চ শিক্ষার জন্য মুহসীন মুর্শিদাবাদ যান। শিক্ষাজীবন শেষে তিনি আরব ও পারস্য দেশ ভ্রমণ করেন এবং আরবি ও পারস্য ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন।
পিতার মৃত্যুর পর বোন মুন্নুজান অঢেল সম্পত্তির মালিক হন। মুহসীন বোনের আশ্রয়ে থেকে ইবাদত, ধর্মীয় আলোচনা ও পরোপকারে ব্রতী হন ও কোরআন শরীফ নকল করে তা বিতরণ করেন। ৬৩ বছর বয়সে ১৭৯৫ সালে তিনি হুগলী ছেড়ে দেশ ভ্রমণে বের হন। তিনি ইরান, ইরাক, আরব, তুরস্ক প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন। ১৮০৩ সালে বোন মন্নুজানের মৃত্যুর পর তিনি উত্তরাধিকারী হিসেবে বোনের বিশাল সম্পত্তি লাভ করেন। এই সম্পত্তির আয় ছিল সে সময় অর্ধলাখ মুদ্রা। এত সম্পদের মালিক হয়েও মুহসীন ছিলেন খুব ধার্মিক ও নিরহঙ্কারী। তিনি খুব সাধারণভাবে জীবনযাপন করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন ধন সম্পদ নিজের ভোগের জন্য নয়, জনসাধারণের উপকারের জন্য।
১৮০৬ সালে তিনি একটি উইল করে তার সব সম্পত্তি দান করে দেন। এই উইল করার পর তিনি ৬ বছর জীবিত ছিলেন। তার দানকৃত অর্থ থেকে ধর্মীয় কর্মকাণ্ড, পেনশন, বৃত্তি ও দাতব্য কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়। হাজী মুহম্মদ মুহসীন শিক্ষানুরাগী ছিলেন। তিনি তার অর্থ দিয়ে হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের ছাত্রদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আজও মুহসীন ফান্ডের অর্থে ভারত ও বাংলাদেশের অসংখ্য দরিদ্র ছাত্র পড়াশোনা করছে । হুগলিতে ‘হুগলি মুহসীন কলেজ’ ও ‘চট্টগ্রামের সরকারি হাজি মুহম্মদ মুহসীন কলেজ’ প্রতিষ্ঠার সময় তার ওয়াকফকৃত অর্থ ব্যবহƒত হয়। হুগলিতে হাসপাতাল ও ‘দৌলতপুর মুহসীন মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ তারই দানের অর্থে গড়ে উঠেছে। ১৮১২ সালের ২৯ নভেম্বর এই মহাত্মা দানবীর মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা