Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 4:55 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াসের ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ‘খোয়াবনামা’ ও ‘চিলেকোঠার সেপাই’ উপন্যাস রচনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেছেন। তার রচিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছোটগল্প রেইনকোট অবলম্বনে মেঘমল্লার (২০১৪) চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। বাংলা ভাষা ও বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বাংলা ভাষা ও বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’ (১৯৮২), খোয়াবনামা উপন্যাসের জন্য ‘সাদত আলী আখন্দ পুরস্কার’ (১৯৯৫), কলকাতার ‘আনন্দ পুরস্কার’ (১৯৯৬) ও একুশে পদক (১৯৯৯)সহ নানা পদক ও সম্মাননা লাভ করেন। স্বল্পপ্রজ লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ১৯৪৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধা জেলার গোটিয়া গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। তার ডাক নাম মঞ্জু। পৈতৃক বাড়ি বগুড়ায়। ১৯৫৮ সালে তিনি বগুড়া জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৬০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। জগন্নাথ কলেজে প্রভাষক হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি  মিউজিক কলেজের উপাধ্যক্ষ, প্রাইমারি শিক্ষা বোর্ডের উপপরিচালক, ঢাকা কলেজের বাংলার প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইলিয়াস মফিজউদ্দিন শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পরিচিত মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেন ও গোপনে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। তিনি প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আখতারুজ্জামান খুব কম লিখেছেন। কিন্তু যা লিখেছেন তার সাহিত্যমান তাকে বাংলা সাহিত্যে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে। দুটি উপন্যাস, পাঁচটি গল্পগ্রন্থ আর একটি প্রবন্ধ সংকলন নিয়ে তার রচনাসম্ভার। আখতারুজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াস দুটো উপন্যাস ছাড়াও  রচনা করেছেন ছোট গল্প- ‘অন্য ঘরে অন্য স্বর’, ‘খোঁয়ারি’, ‘দুধভাতে উৎপাত’, ‘দোজখের ওম’ ও ‘জাল স্বপ্ন, স্বপ্নের জাল’। প্রবন্ধ সংকলনের মধ্যে রয়েছে সংস্কৃতির ভাঙ্গা সেতু। তার এসব লেখায় উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ ও যু৬দ্ধপরবর্তী রাজনৈতিক এবং সামাজিক বাস্তবতার কাহিনী। পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী ইলিয়াস সম্পর্কে বলেন, ‘কী পশ্চিম বাংলা, কী বাংলাদেশ সবটা মেলালে তিনি শ্রেষ্ঠ লেখক। আর কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেছেন, ‘ইলিয়াসের উপন্যাস প্রকৃতপক্ষেই বিশ্বমানের, নোবেল পুরস্কার পেয়ে থাকেন যেসব কথাসাহিত্যিক, তিনি ছিলেন সেই মাপের লেখক।’ তার বেশ কয়েকটি লেখা অন্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তিনি ১৯৯৭ সালের ৪ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা