উদীচী সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সত্যেন সেনের আজ ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী। তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় চল্লিশ। এছাড়া তিনি রবীন্দ্রসংগীত ও গণসংগীতের সুকণ্ঠ গায়ক এবং গণসংগীত রচয়িতা। তিনি আদমজী সাহিত্য পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। সত্যেন সেন ১৯০৭ সালের ২৮ মার্চ বিক্রমপুর (বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলা) টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তার ডাক নাম ছিল লস্কর। তিনি যখন সোনারং হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র তখন থেকেই তার মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ লাভ করে। কলেজে পড়াকালীন তিনি বিপ্লবী দল যুগান্তর সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন। এ কারণে তিনি ১৯৩১ সালে গ্রেপ্তার হন ও কারাবরণ করেন। জেলে থেকেই তিনি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন। ব্রিটিশ শাসনামলে ও পরে পাকিস্তান আমলেও তিনি ১৯৪৯, ১৯৫৪, ১৯৫৮ ও ১৯৬৫ সালে রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার হন ও বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেন। ১৯৪৮ সালে কারা প্রশাসনের অত্যাচার ও নির্যাতনে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কারাগারে অবস্থানকালে তিনি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৯৫৩ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি সোনারাংয়ে ফিরে কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। শ্রমিকদের নিয়ে তিনি গান এবং পালা রচনা করতেন ও রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে তা পরিবেশন করতেন। তার লেখা ১১টি গানের মধ্যে ‘চাষি দে তোর লাল সেলাম/তোর লাল নিশানারে’ গানটি তখন চাষিদের মধ্যে ব্যাপক প্রেরণা জাগায়। সত্যেন সেন লেখক ও শিল্পী সংঘের সংগঠক এবং ১৯৬৯ সালে উদীচী সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠা করেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতার পর তিনি উদীচী পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন। সত্যেন সেন দৈনিক ‘মিল্লাত’, দৈনিক ‘সংবাদ’-পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। তার রচিত সাহিত্যের মধ্যে বাংলাদেশের কৃষকের সংগ্রাম, মানবসভ্যতার ঊষালগ্নে, ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলমানদের ভূমিকা; শিশুসাহিত্যÑপাতাবাহার, জীবনীÑমনোরমা মাসীমা, সীমান্তসূর্য আবদুল গাফফার খান প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
১৯৮১ সালের ৫ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা