ফ্রান্সের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারে বীরযোদ্ধা, সেনাপতি ও বিপ্লবী জোয়ান অব আর্ক। তাকে বলা হয় পরাধীন ফ্রান্সের মুক্তিদাত্রী। ইংরেজদের সঙ্গে শতবর্ষব্যাপী যুদ্ধে তিনি ফরাসি সৈন্যবাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
জোন ১৪১২ সালের ৬ জানুয়ারি ফ্রান্সের উত্তর-পূর্বে ডমরেমি অঞ্চলে এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তিনি খুব ধার্মিক জীবনযাপন করতেন। ফ্রান্স তখন ইংরেজদের শাসনাধীন ছিল। কিশোরী জোন ফ্রান্সের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার ও ফ্রান্সের প্রকৃত রাজাকে ক্ষমতায় পুনর্বহাল করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। সে সময় ইংরেজ শাসক ষষ্ঠ হেনরি ফ্রান্সের সিংহাসনে আরোহণ করলে ফ্রান্সের রাজা সপ্তম চার্লস পালিয়ে যান। জোন অনেক চেষ্টা করে পলাতক রাজা সপ্তম চার্লসের সঙ্গে দেখা করেন এবং দেশের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের জন্য তার কাছে সৈন্য প্রার্থনা করেন। রাজা জোনকে ৪ হাজার সৈন্য সাহায্য দিতে সম্মত হন। জোন ইংরেজ সৈন্যদের দখল থেকে ফ্রান্সের অবরুদ্ধ নগরী অধিকার করে ফ্রান্সকে মুক্ত করে। এর ফলে সপ্তম চার্লস ফ্রান্সের রাজা হিসেবে আবারও সিংহাসনে অভিষিক্ত হন। জোনের বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্বে ফ্রান্স ইংল্যান্ডের মধ্যকার শতবর্ষব্যাপী যুদ্ধের অবসান ঘটে। ফ্রান্স স্বাধীনতার লাভ করে ঠিকই কিন্তু পরাজিত ইংরেজরা জোনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে নানা ফন্দি আঁটতে থাকে। পরবর্তী সময়ে কম্পেন যুদ্ধের সময় বার্গেন্ডিবাসীদের হাতে জোন আটক হয়। বার্গেন্ডিরা জোনকে ইংরেজদের কাছে বিক্রি করে দেয়।
এরপর এক ইংরেজ পাদ্রির অধীনে জোনের বিচারকার্য চলে। তবে তার কোনো অপরাধ খুঁজে পাচ্ছিল না। অবশেষে তারা জানতে পারে তিনি কিশোরী হয়েও একজন পুরুষের ছদ্মবেশ ধরেছিলেন। এ বিষয়টাকে কেন্দ্র করে তারা তাকে ধর্মদ্রোহী সাব্যস্ত করে। প্রহসনমূলক বিচার শেষে তার শাস্তি হয় জীবন্ত আগুনে মৃত্যু। এই রায় অনুসারে জোনকে ১৪৩১ সালের ৩০ মে জীবন্ত আগুনে জ্বালিয়ে মৃতুদণ্ড কার্যকর করে, তার ভস্ম দেহ ছড়িয়ে দেয়া হলো ফ্রান্সের সীন নদীতে।
জোনের নির্মম মৃত্যুর পর ফরাসিরা প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। তারা রাগে-ক্ষোভে ফ্রান্সে ইংরেজদের সব অধিকার ও চিহ্ন চিরতরে মুছে দেয়। এ ঘটনার ২৫ বছর পর পোপ তৃতীয় ক্যালিক্সটাস ঘোষণা দেন, জোন সম্পূর্ণ নিরপরাধ ও নিষ্পাপ ছিলেন। চার্চের রায় মিথ্যা ছিল। ১৯২০ সালে ক্যাথলিক চার্চ জোন অব আর্ককে সেইন্ট হিসেবে ঘোষণা দেয়।
কাজী সালমা সুলতানা