জাপানের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সম্রাট হিরোহিতোর ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে জাপানের সম্রাট হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। প্রায় ৬৩ বছর তিনি জাপানের সম্রাটের আসনে ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকাল ও যুদ্ধ-পরবর্তীতে গণতান্ত্রিক জাপানের শাসনামলেও তিনি শাসনকার্য পরিচালনা করেন। তার সাম্র্রাজ্যকালকে ‘শোওয়া’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। মিচিনোমিয়া হিরোহিতো ১৯০১ সালের ২৯ এপ্রিল টোকিওর আওয়ামার রাজপ্রাসাদে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের তখন হিরোহিতোর দাদা সম্রাট মেইজি জাপানের সাম্রাজ্য পরিচালনা করতেন। প্রথানুসারে, রাজপরিবারের সদস্যরা তাদের পিতামাতার নিকট প্রতিপালিত হতো না। ছোটবেলায় হিরোহিতোকে রাজকুমার মিচি বলে সম্বোধন করা হতো। তিনি অবসরপ্রাপ্ত ভাইস অ্যাডমিরাল এবং তারপরে একটি সাম্রাজ্য পরিচারকের তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন। হিরোহিতো সামরিক ও ধর্মীয় বিষয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ে জ্ঞানলাভ করেন। ১৯১২ সালে সম্রাট মেইজি মারা যাওয়ার পর হিরোহিতোর বাবা ইওশিহিতো সম্রাট হিসেবে রাজসিংহাসন গ্রহণ করেন। হিরোহিতো ১৯১৪ সালে পদোন্নতি পেয়ে সামরিক বাহিনীতে লেফটেন্যান্ট ও নৌবাহিনীতে উপ-লেফটেন্যান্ট পদ পান। ১৯১৬ সালে তিনি সামরিক বাহিনীর ক্যাপ্টেন ও নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট পদে উন্নীত হন। তিনি গ্র্যান্ড কর্ডন অব দ্য অর্ডার অব ক্রাইস্যান্থেমাম হিসেবে সম্মানিত হন। ১৯১৬ সালে হিরোহিতোকে জাপান সাম্রাজ্যের যুবরাজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তিনি জাপানের ১২৪তম সম্রাট। রাজ্যভার গ্রহণের সময় জাপান বৃহৎ শক্তিধর দেশের অন্যতম ছিল। তিনি ছিলেন প্রথম সম্রাট যিনি নিজ দেশের বাইরে ভ্রমণ করেন। যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সম্রাট হিরোহিতোর ভূমিকা ছিল যথেষ্ট বিতর্কিত। বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ওপর পারমাণবিক বোমা হামলায় যুদ্ধের মোড় পাল্টে গিয়েছিল। পরে সম্রাট হিরোহিতো একটি রেডিওতে জাপানের আত্মসমর্পণ ঘোষণা করেন।যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করেন। এই নতুন সংবিধান অনুসারে খুব কম ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতীকী ব্যক্তিতে পরিণত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে প্রাণ হারানো মানুষের জন্য সর্বসমক্ষে শোক প্রকাশ করে গেয়েছেন। এমনকি যুদ্ধে তার ভূমিকা নিয়ে তিনি সবসময় অনুতাপ বোধ করতেন। জাপানের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নতির ক্ষেত্রে তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করেন। সম্রাট হিরোহিতো মেরিন বায়োলজি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি বেশকিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। তিনি ১৯৮৯ সালের ৭ জানুয়ারি মৃৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যু-পরবর্তীকালে আনুষ্ঠানিকভাবে তার নতুন নামকরণ করা হয় শোয়া সম্রাট।
কাজী সালমা সুলতানা