ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী মহাবিশ্বের সৃষ্টিরহস্য ‘বিগ ব্যাং থিউরি’র প্রবক্তা অধ্যাপক স্টিফেন হকিংয়ের ৮১তম জন্মদিন আজ। মহাবিশ্বের সৃষ্টিরহস্যের তাত্ত্বিক ব্যাখায় কৃষ্ণবিবর আর বিকিরণতত্ত্ব দিয়ে তিনি শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীর মর্যাদা পান। পদার্থবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ ও দার্শনিক গ্যালিলিও গ্যালিলাই’র মৃত্যুর ঠিক ৩০০ বছর পর ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি হকিং ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশরে লন্ডনের হাইগেটের বাইরন হাউস স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। ১৭ বছর বয়সে ১৯৫৯ সালে তিনি প্রথম শ্রেণিতে সম্মানসহ কলাবিদ্যায় স্নাতক উপাধি অর্জন করেন। ১৯৬২ সালে হকিং ক্যামব্রিজে কসমোলজির ওপর স্নাতকোত্তর লেখাপড়া শুরু করেন।
১৯৬৩ সালে তিনি দুরারোগ্য মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হন। রোগের প্রকোপ কিছুটা থামলে হকিং তার সুপারভাইজার ডেনিশ উইলিয়াম শিয়ামার সাহায্যে পিএইচডি অভিসন্দর্ভের কাজে মনোযোগ দেন। ১৯৬৬ সালে তিনি ফলিত গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে ডক্টরেট উপাধি লাভ করেন। তত্ত্বীয় কসমোলজি আর কোয়ান্টাম মধ্যাকর্ষ তার প্রধান গবেষণা ক্ষেত্র। ১৯৮৮ সালে ‘অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ বইয়ের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত হয়ে ওঠেন হকিং। আন্তর্জাতিকভাবে বেস্ট সেলার হিসেবে বইটির এক কোটি কপি বিক্রি হয়। মহাবিশ্ব নিয়ে প্রকাশিত তার সর্বশেষ বই ‘দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন’।
হকিং আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা এবং বোর-হাইজেনবার্গের কোয়ান্টাম তত্ত্বকে মিলিয়ে দেন। হকিং কৃষ্ণবিবরের বাইরে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা তত্ত্বের প্রয়োগ করলেন। অনিশ্চয়তা তত্ত্ব কোনো শূন্যস্থানে বিশ্বাস করে না। ফলে মহাশূন্যের কোনোটাই শূন্য নয়। সেখানে সব সময় কণা-প্রতিকণার সৃষ্টি হচ্ছে এবং নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে বিলীন হচ্ছে। হকিং প্রমাণ করেন, কৃষ্ণবিবরের আকর্ষণে এ রকম জোড়া কণার কোনোটি আটকে পড়ে যেতে পারে এবং কৃষ্ণবিবর থেকে ভর সংগ্রহ করে তা মূর্ত হয়ে ওঠে। ফলে কৃষ্ণবিবর আর কৃষ্ণ থাকছে না। অনবরত সেখান থেকে বের হয়ে আসছে কণা স্রোত। এই কণাস্রোতের নাম দেয়া হয়েছে হকিং বিকিরণ। আইনস্টাইনের পর হকিং বিখ্যাত পদার্থবিদ হিসেবে বিবেচিত। ২০০৯ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম’ খেতাব পান। তিনি প্রিন্স অব অস্ট্রিয়ান্স, জুলিয়াস এডগার লিলিয়েনফেল্ড, আলবার্ট আইনস্টাইন পদকসহ এক ডজনেরও বেশি পদক লাভ করেন। হকিং ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা