উপমহাদেশের প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড দেবেন সিকদারের ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম কংগ্রেসে প্রস্তাবিত তৃতীয় দলিলটি উপস্থাপন করেন তিনি। এই দলিলের অন্যতম একটি এজেন্ডা ছিল পাকিস্তান ভেঙে পূর্ব বাংলায় পৃথক রাষ্ট্র কায়েম করতে হবে। প্রস্তাবিত দলিলটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। তারই নেতৃত্বে ‘আখ বিদ্রোহ’ ও ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ ‘রাজশাহী জেল বিদ্রোহ’ সংঘটিত হয়। রাজনৈতিক কারণে তিনি একাধিকবার কারাবরণ করেন। দেবেন সিকদার ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারার শোলকাটা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলায় শিক্ষার সুযোগ না পেলেও, শিক্ষার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকায় নিয়মিত লেখাপড়া করে তিনি স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠেন। জীবনের প্রয়োজনে তিনি গৃহভৃত্য, পাখা টানার বয়, পিয়ন, কুলি, দপ্তরি প্রভৃতি পেশায় কাজ করেন। কাজের ফাঁকে তিনি রাহুল সাংকৃত্যায়ন, ম্যাক্সিম গোর্কি, সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, কোপারনিকাস, গ্যালিলিও, ডারউইন, আইনস্টাইন, কমরেড মোজাফফর আহমদের বই পড়ে রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ হন । ১৯৩০ সালে তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন।
১৯৪৮ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির চট্টগ্রামে জেলা শাখার সম্মেলনে তিনি সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে তিনি পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করলে দলের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২২ বছর আত্মগোপনে থেকে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি রেল, ডাক, বন্দর, বিদ্যুৎ, পাট, তুলা, ওয়াসা, ব্যাংক, সওদাগরি ফার্মসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৬৯ সালের ১৭ জুলাই তিনি প্রথম গ্রেপ্তার ও পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ গঠনের প্রচেষ্টার অপরাধে সামরিক আদালতের রায়ে তার দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে তিনি বাজশাহী কারাগারে বিদ্রোহ করেন এবং রাজবন্দি, কয়েদিদের মুক্ত করেন। এরপর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭২ সালে তার নেতৃত্বে বাংলাদশ মজদুর পার্টি গঠিত হয়। তিনি কমিউনিস্টদের বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে গেছেন। রাজনীতি ছাড়াও বেশ কিছু গ্রন্থ তিনি রচনা করেন। তার লেখা বইগুলোর মধ্যে রাজনীতি কী ও কেন?, সমাজতন্ত্র কী ও কে?, জ্ঞানের উৎসাহ, দ্বৈত শোষণের যাঁতাকলে বাংলার আখচাষি তথা কৃষক সমাজ, হাতির ধর্মঘট, গল্পের চেয়েও রোমাঞ্চকর ২২ বছরের গোপন জীবন উল্লেখযোগ্য। তিনি ১৯৯৪ সালের ৯ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা