বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন বন্ধু, সাংবাদিক, টেলিভিশন উপস্থাপক ও প্রতিবেদন নির্মাতা সাইমন ড্রিংয়ের ৭৮তম জন্মদিন আজ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাকিস্তান বাহিনীর আক্রমণের বিবরণ গণমাধ্যম ও সংবাদপত্রে তুলে ধরে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সাইমন ড্রিং ১৯৪৫ সালের ১১ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের নরফোকের ফাকেনহ্যামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে তিনি বহির্বিশ্ব ভ্রমণের অংশ হিসেবে ভারত ভ্রমণ করেন। ১৭ বছর বয়সে তিনি প্রথম চাকরিতে যোগদান করেন। পেশাগত জীবনে তিনি ২২টি যুদ্ধ ও অভ্যুত্থান কাভার করেছেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধ এবং বাংলাদেশের গণহত্যার ওপর প্রতিবেদন করে তিনি বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ওয়ার্ল্ড সংবাদপত্রে সম্পাদনা সহকারী হিসেবে কাজে যোগ দেন। এরপর নিউইয়র্ক টাইমস ও রয়টার্সের মতো খ্যাতনামা গণমাধ্যমে দায়িত্ব পালন করেন। গত শতকের সত্তর ও আশির দশকে তিনি ডেইলি টেলিগ্রাফ এবং বিবিসি টেলিভিশন নিউজের বৈদেশিক সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭১ সালে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তান সামরিক সরকার ৪০ বিদেশি সাংবাদিককে ঢাকায় আসার অনুমতি দেয়। সেসময় সাংবাদিক সায়মন ড্রিং ঢাকায় আসেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী নির্মম নির্যাতন চালায় নিরীহ বাঙালির ওপর। এ সময় তিনি পাকিস্তানি বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে অপারেশন সার্চলাইটের ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার অসংখ্য ছবি তোলেন। ২৭ মার্চ ব্রিটিশ হাইকমিশনের সহায়তায় ব্যাংককে গিয়ে সেসব গণহত্যার ছবি দিয়ে প্রকাশ করেন ‘ট্যাংকস ক্রাশ রিভল্ট ইন পাকিস্তান’, যা সে সময় বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং এ কাজের জন্য ২০১২ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল রিপোর্টার অব দ্য ইয়ার’ অর্জন করেন তিনি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর সঙ্গে আবারও প্রবেশ করেন স্বাধীন বাংলাদেশে। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ঢাকা ফিরে আসার পর তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাইমন ড্রিং ছিলেন পৃথিবীর বিপদগ্রস্ত মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্ভিক্ষপীড়িত অঞ্চলের জনগণকে সহায়তার জন্য তিনি একটি দাতব্য তহবিলের ধারণা তুলে ধরেন। ১৯৮৬ সালে তিনি দুটি দাতব্য তহবিল গড়েন। তিনি ১৯৯৭ সালে টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সালে তৎকালীন সরকার সাইমন ড্রিংয়ের ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করলে তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান। তিনি ২০২১ সালের ১৬ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা
