স্মরণীয়-বরণীয়

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু জ্যাকব-ফারজ-রাফায়েল জেএফআর”জ্যাকবের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ দিকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণে প্রধান ভূমিকা রাখেন জ্যাকব। তিনি নিজ হাতে পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিলের খসড়া তৈরি করেন। তারই যুদ্ধ কৌশলের ফলে স্বল্পতম সময়ে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। জেনারেল জ্যাকব ১৯২৩ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন অপারেশন সার্চলাইট ও পরবর্তীতে গণহত্যা, অত্যাচার দেখে জ্যাকব বিচলিত হন। তিনি পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের শেষ ভাগে ৩ থেকে ১৬ ডিসেম্বর যতগুলো অপারেশন হয়েছে তার নিয়ন্ত্রণে ছিলেন জ্যাকব। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে তিনি বুঝতে পারেন, দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের মাধ্যমে কোনো ফল লাভ সম্ভব হবে না। তখন তিনি ঢাকাকে দ্রুত পাকিস্তানের দখল মুক্ত করে বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্য পরিকল্পনা করেন। সে সময় ঢাকায় ৩০ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য অবস্থান করছিল এবং তাদের পক্ষে মার্কিন সপ্তম নৌবহর যেকোনো মুহূর্তে সৈন্য নামানোর অপেক্ষায় ছিল। লেফটেন্যান্ট জেনারেল জ্যাকব তার বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করে পাকিস্তানকে আত্মসমর্পণ করার ত্বরিত পরিকল্পনা নেন। দিল্লির সঙ্গে পরামর্শ না করেই তিনি নিজে আত্মসমর্পণের দলিলের একটা খসড়া তৈরি করে নিয়াজির কাছে পাঠিয়ে দেন। পাকিস্তানিরা সে সময় জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের অপেক্ষায় ছিল। তারা যুদ্ধবিরতির অযুহাতে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের পরিকল্পনার পথে হাঁটছিল।

জ্যাকব সে সুযোগ না দিয়ে নিয়াজীকে বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি মানা যাবে না, উম্মুক্ত আত্মসমর্পণ দলিল আধা ঘণ্টার মধ্যে মেনে নিতে হবে, নইলে ঢাকায় বোম্বিং শুরু হয়ে যাবে। এতে তারা সবাই মারা পড়বে। তার কথায় নিয়াজি হতভম্ব হয়ে আত্মসমর্পণের জন্য রাজি হয়ে যান। জেনারেল জ্যাকব নিয়াজীকে বুঝতেই দেননি, সে সময় ঢাকায় মাত্র হাজার তিনেক সৈন্য ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার এর পক্ষ থেকে ২০১২ সালের ২৭ মাচ তাকে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে তিনি দুটি বই লিখেছেন ‘সারেন্ডার ইন ঢাকা, ‘বার্থ অব এ নেশন এবং অ্যান ওডিসি ইন ওয়ার অ্যান্ড পিস’। ২০১৬ সালের

১৩ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০