Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 7:43 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

প্রখ্যাত নাট্যকার সেলিম আল দীনের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ‘দ্বৈতাদ্বৈতবাদী শিল্পতত্ত্ব’ নামে বাংলা নাটকের আধুনিক রচনারীতি ও পরিবেশনা শৈলীর নতুন রূপ নির্মাণ করেন তিনি। দেশের একমাত্র বাংলা নাট্যকোষেরও প্রণেতা তিনি। চলচ্চিত্রের সংলাপ রচনা ও মঞ্চনাট্যের নির্দেশক হিসেবেও তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তার নাটক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত। সেলিম আল দীন ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সেনেরখীল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার চাকরির সূত্রে বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করে ১৯৭৪ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ও নাট্যনির্দেশক নাসির উদ্দিন ইউসুফ মিলে প্রতিষ্ঠা করেন নাট্যদল ‘ঢাকা থিয়েটার’। সেলিম আল দীন ১৯৮১-৮২ সালে দেশব্যাপী গড়ে তোলেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার। ১৯৮৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ’ তার উদ্যোগেই খোলা হয়। ওই বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

সেলিম আল দীন ছোটবেলা থেকেই বই পড়া ও লেখালেখিতে মনোযোগী হয়ে ওঠেন। ১৯৬৮ সালে ‘দৈনিক পাকিস্তান’ পত্রিকায় তার প্রথম প্রবন্ধ ‘নিগ্রো সাহিত্য’ প্রকাশিত হয়। ১৯৯৫ সালে সেলিম আল দীন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। বাংলা নাটকে তিনি কথা-নৃত্য-গীতের বহুমাত্রিক ব্যবহার করেন। তার রচিত নাটকের মধ্যে ‘মুনতাসির ফ্যান্টাসি’, শকুন্তলা, কীত্তনখোলা, কেরামতমঙ্গল, যৈবতী কন্যার মন, চাকা, হরগজ, প্রাচ্য, হাতহদাই, নিমজ্জন, ধাবমান, পুত্র ও বনপাংশুল উল্লেখযোগ্য। তার রচিত ‘নিমজ্জন’ এক মহাকাব্যিক উপাখ্যান। সেলিম আল দীন বাংলা নাটকের হাজার বছরের ইতিহাস নিয়ে রচনা করেন ‘মধ্যযুগের বাংলা নাট্য’ (১৯৯৬)। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ কবি ও তিমি, উপন্যাস অমৃত উপাখ্যান। এছাড়া তার রচিত সব গ্রন্থ নিয়ে পাঁচ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে সেলিম আল দীন রচনাসমগ্র। বাংলা নাটকে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, নান্দিকার পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ দেশি-বিদেশি বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা