বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, রাজনীতিবিদ ক্যাপ্টেন মো. মনসুর আলীর আজ ১০৪তম জন্মবার্ষিকী। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তীতে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে গঠিত বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলহত্যার ফলে নিহত চার জাতীয় নেতার মধ্যে তিনিও একজন। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ১৯১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সিরাজগঞ্জ বিএল হাইস্কুল থেকে এসএসসি, পাবনা অ্যাডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি ও ১৯৪১ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে অর্থনীতিতে বিএ পাস করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ এবং আইন ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি পাকিস্তান ন্যাশনাল গার্ড (পিএনজি) ক্যাপ্টেন পদে অধিষ্ঠিত হয়ে যশোর সেনানিবাসে প্রশিক্ষণ নেন। তখন থেকেই তিনি ‘ক্যাপ্টেন মনসুর’ নামেই পরিচিত হন। আলীগড় থেকে দেশে ফেরার পর তিনি আইন পেশায় জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫১ সালে তিনি আওয়ামী-মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং একই বছর পাবনা জেলা আদালতে আইনব্যবসা শুরু করেন। তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং দলের পাবনা জেলা কমিটির সভাপতি ছিলেন। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ১৯৫২ সালে পাবনা শহরে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ভাষা আন্দোলনের সময় ও তার পরবর্তীতেও কয়েকবার তিনি আটক ও কারাভোগ করেন। ১৯৫৪ সালে পূর্ববাংলা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, ১৯৫৬ সালে আইন ও সংসদ বিষয়ক; খাদ্য ও কৃষি এবং শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে যোগাযোগমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশাল) গঠন হলে তার সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন। ২৩ আগস্ট তৎকালীন শাসক মনসুর আলী ও অপর তিন জাতীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে বন্দি করে। কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক অবস্থায় ৩ নভেম্বর অপর তিন জাতীয় নেতাসহ তিনি নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন।
কাজী সালমা সুলতানা
