বাংলাদেশের সাংবাদিকতার পথিকৃৎ চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিনের ৭৮তম জন্মদিবস আজ। মফস্বল সাংবাদিকতায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরিতে তিনি সংযোজন করেছিলেন এক ভিন্ন মাত্রা। মোনাজাতউদ্দিন ১৯৪৫ সালের ১৮ জানুয়ারি রংপুর শহরের কেরানীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কৈলাশরন স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও কারমাইকেল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। তরুণ বয়সে ‘বগুড়া বুলেটিন’ পত্রিকায় যোগদানের মাধ্যমে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬২ সালে তিনি ঢাকার ‘দৈনিক আওয়াজ’ পত্রিকায় ও পরে ‘দৈনিক পূর্বদেশ’ পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৬৬ সালে স্নাতক পাস করার পর দৈনিক আজাদ পত্রিকায় রংপুরের নিজস্ব সংবাদদাতা হিসেবে তিনি কাজ করা শুরু করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি যোগ দেন দৈনিক সংবাদে। সংবাদে ‘পথ থেকে পথে’ ধারাবাহিক প্রতিবেদনের জন্য মোনাজাতউদ্দিন পরিচিতি ও সুখ্যাতি লাভ করেন। একনাগাড়ে বিশ বছর ‘সংবাদ’-এ কাজ করার পর তিনি ১৯৯৫ সালে দৈনিক জনকণ্ঠে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন। দৈনিক রংপুর নামে তিনি একটি পত্রিকাও প্রকাশ করেছিলেন। তিনি নিজেকে ‘তৃণমূল মানুষের সংবাদকর্মী’ বলতেন। সংবাদ সংগ্রহের পাশাপাশি তিনি আলোকচিত্রও ধারণ করতেন। রিপোর্টিং ছাড়াও গল্প, কবিতা, ছড়া ও নাটক রচনায় তিনি দক্ষ ছিলেন। তিনি ভালো গীতিকার ও নাট্যকারও ছিলেন। রংপুর বেতারে নিয়মিত কাজ করেছেন। তার একাধিক নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিন গ্রামীণ এলাকায় মানুষের কুসংস্কার, অন্ধতা দূর করতে তরুণদের নিয়ে সংগঠন করেন। কখনও তাদের নিয়ে নাটক করেছেন, আবার সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে উৎসাহ দিয়েছেন। জীবিত অবস্থায় নয়টি ও মৃত্যুর পরে দুইটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তার। পাশাপাশি লিখেছেন জীবনের অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ নানান ঘটনা। তার রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে; পথ থেকে পথে, সংবাদ নেপথ্য, কানসোনার মুখ, পায়রাবন্দের শেকড় সংবাদ, নিজস্ব রিপোর্ট, ছোট ছোট গল্প, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন: গ্রামীণ পর্যায় থেকে, চিলমারীর একযুগ, শাহা আলম ও মজিবরের কাহিনী, লক্ষ্মীটারী, কাগজের মানুষেরা, মোনাজাতউদ্দিন রচনাসমগ্র। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য মোনাজাতউদ্দিন জহুর হোসেন স্বর্ণপদক, ফিলিপস পুরস্কার ও একুশে পদক ছাড়াও নানা পদক লাভ করেন। ১৯৯৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর গাইবান্ধার সংবাদ সংগ্রহের সময় তিনি ফেরি থেকে পড়ে মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা