শহিদ ছাত্রনেতা আসাদের ৫৪তম শহিদ দিবস আজ। তিনি ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খান সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের ১১ দফা কর্মসূচির মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে জীবন দেন। প্রতি বছর দিনটিকে শহিদ আসাদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে তিনি স্বাধীনতা পদক পান। আসাদ ১৯৪২ সালের ১০ জুন নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার ধানুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। ১৯৬৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ এবং ১৯৬৭ সালে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে এম.এ শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। আসাদ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রুপ) ঢাকা হল শাখার সভাপতি এবং একই সঙ্গে কৃষক সংগঠক ছিলেন। ১৯৬৯ সালেন ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা ও ছাত্রদের ১১ দফা দাবির সঙ্গে ছাত্র সংগঠনের নেতারা একাত্মতা পোষণ করেন। এই সভায় প্রধান ভূমিকা রাখেন আসাদ। ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভা থেকে ২০ জানুয়ারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূর্ণ ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানানো হয়। এ ধর্মঘট মোকাবিলার জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। ২০ জানুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙে প্রায় ১০ হাজার ছাত্রজনতার মিছিলের ওপর পুলিশ হামলা চালায়। মিছিল, অবস্থান ও সেøাগানের এক পর্যায়ে পুলিশের গুলিতে শহিদ হন আসাদ। আসাদের মৃত্যুতে ঊনসত্তরের গণআন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আইয়ুবের নামফলক নামিয়ে ফেলে। ‘আইয়ুব গেট’ হয়ে যায় ‘আসাদ গেট’, ‘আইয়ুব এভিনিউ’ হয়ে যায় ‘আসাদ এভিনিউ’।
ছাত্রজনতার মিছিলে শহিদ আসাদের রক্তমাখা শার্ট দেখে কবি শামসুর রাহমান রচনা করেন তার অমর কবিতা ‘আসাদের শার্ট’। কবি হেলাল হাফিজ লেখেন ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতা। আলোকচিত্র শিল্পী রশীদ তালুকদার তার ক্যামেরায় আসাদের শার্টের ছবি তোলেন। আসাদের নাম হয়ে ওঠে নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মূর্ত প্রতীক।
কাজী সালমা সুলতানা