স্মরণীয়-বরণীয়

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী ও তথ্যচিত্র নির্মাতা রবীন সেনগুপ্তের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ত্রিপুরা অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান আলোকচিত্রী ছিলেন তিনি। রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শহিদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের লাশের ছবিটি তারই তোলা। ‘চিত্র-সাংবাদিকের ক্যামেরায় মুক্তিযুদ্ধ।’ আলোকচিত্র-সংবলিত বইয়ের রচয়িতা তিনি।

রবীন সেনগুপ্ত ১৯৩০ সালের ২০ ডিসেম্বর আগরতলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার আদি নিবাস মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরে। তিনি উমাকান্ত একাডেমি ও পরে বিশ্বভারতী থেকে শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি ফ্রিল্যান্স চিত্র সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ, তথ্যচিত্র নির্মাণেও প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৫৬-১৯৬২ সালে আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও জীবন নিয়ে ত্রিপুরার প্রথম রঙিন ছবি নির্মাণ করেন তিনি। ১৯৫৯ সালে তিনি ব্রাজিলে আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তিনি প্রথম স্থান লাভ করেন। ১৯৬২ সালে তিনি দি রয়েল ফটোগ্রাফি সোসাইটি অব গ্রেট ব্রিটেনের সদস্যপদ ও ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া ফটোগ্রাফিরও সদস্য পদ লাভ করেন। ১৯৬২ সালে তার নির্মিত প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘দি টেইলার্স অব ট্রাইবাল লাইফ অব ত্রিপুরা’ চতুর্থ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। তিনি ৩০টিরও বেশি ডকুমেন্টারি ছবি নির্মাণ করেন। তন্মধ্যে হ্যান্ডলুম অ্যান্ড হ্যান্ডক্রাফট অব ইন্ডিয়া, গ্লিমসেস অব ত্রিপুরা, প্রিয়দর্শিনী ইন্দিরা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ , জনগণের জয় শারদোৎসব ইত্যাদি।

রবীন সেনগুপ্ত গবেষণামূলক প্রবন্ধকার ও লেখক হিসেবেও সুনাম অর্জন করেন। ত্রিপুরার স্থাপত্য শিল্প সাহিত্য সাংস্কৃতি বিষয়ে তিনি বহু সাহিত্য ও প্রবন্ধ রচনা করেন। একাত্তরে মার্চেও শুরু থেকেই তিনি জড়িয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে, ক্যামেরা হাতে ঘুরেছেন শরণার্থী শিবিরে, সীমান্তবর্তী প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে, দেখেছেন সর্বস্তরের যোদ্ধাদের এবং মুক্তিবাহিনীয় সঙ্গী হয়ে এসেছেন মুক্তাঞ্চলে। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের দিনে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সঙ্গে তিনিও ছিলেন ঢাকায়। রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের দৃশ্য ধারণ করেছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে তার তোলা ছবি ভারত ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ছাপা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে অবদানের জন্য ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘মুক্তিযুদ্ধে বন্ধু সম্মাননা’ পদকে ভূষিত করে। তিনি স্টেটসম্যান যুগান্তর, অমৃতবাজার, আনন্দবাজার, দ্য স্টেটসম্যান, হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ডসহ ভারতের বিভিন্ন পত্রিকার সঙ্গেও কাজ করেছেন । রবীন সেনগুপ্ত ২০১৭ সালের ৭ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০