Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 3:37 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

প্রখ্যাত কবি, শিশুসাহিত্যিক, অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ১৪১তম জন্মদিন আজ। বাংলা সাহিত্যে তিনি ‘ছন্দের জাদুকর’ ও ‘ছন্দোরাজ’ নামে পরিচিত। তার বিখ্যাত ‘মানুষ জাতি’ কবিতায় তিনি মানুষ জাতির ঐক্য ও সম্প্রীতির  জয়গান করে বলেন, ‘জগৎ জুড়িয়া আছে এক জাতি, সে জাতির নাম মানুষ জাতি।’

কবিতার মাধ্যমে তিনি দেশাত্মবোধ, মানবপ্রীতি, ঐতিহ্যচেতনা, শক্তিসাধনা  প্রভৃতি প্রকাশ করেছেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদও করেছেন।

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ১৮৮২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কলকাতার নিমতা গ্রামে সাংস্কৃতিক পরিবারে জš§গ্রহণ করেন। তার পিতামহ অক্ষয়কুমার দত্ত ছিলেন তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক। সত্যেন্দ্রনাথ ১৮৯৯ সালে কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স ও ১৯০১ সালে বর্তমান স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে এফএ পাস করে বিএ ক্লাসে পড়াশোনা করেন। পড়া শেষ না করেই বাবার ব্যবসায় যুক্ত হওয়ার মধ্যদিয়ে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন।কিছুদিন পড়ে ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে তিনি কাব্যচর্চায় আত্মোনিয়োগ করেন।

সত্যেন্দ্রনাথ মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও অক্ষয় কুমার বড়ালের মতো খ্যাতিমান সাহিত্যিকদের দ্বারা প্রভাবিত হন। প্রথম দিকে তিনি রবীন্দ্র অনুসারী হলেও পরে তিনি স্বতন্ত্র কবি হয়ে ওঠেন। নানা ধরনের ছন্দ নির্মাণ ও ছন্দ উদ্ভাবনে বিশেষভাবে পারদর্শী হন তিনি।

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলা ভাষার নিজস্ব বাগধারা ও ধ্বনি-সহযোগে নতুন ছন্দ সৃষ্টি করেন। অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বের কাব্যসাহিত্যের সঙ্গে তিনি বাংলার যোগাযোগ ঘটান। আরবি, ফারসি, চীনা, জাপানি, ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার বহু কবিতা অনুবাদ করে তিনি বাংলা সাহিত্যবৈচিত্র্যের সমৃদ্ধি সাধন করেন। বাংলা শব্দের সঙ্গে আরবি-ফার্সি শব্দের সমন্বিত ব্যবহার দ্বারা বাংলা কাব্যভাষার শক্তি বৃদ্ধির প্রাথমিক কৃতিত্ব তারই। সমাজের অবহেলিত, অস্পৃশ্য ও সাধারণ মানুষ নিয়েও তিনি কবিতা লেখেন। তিনি তার কবিতায় ছন্দের কারুকাজ, শব্দ ও ভাষার অভূতপূর্ব ব্যবহার করেছেন।

নবকুমার, কবিরত্ন, অশীতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, কলমগীর প্রভৃতি ছদ্মনামে তিনি কবিতা লেখেন। সাহিত্যকর্মে ছন্দের রাজা সত্যেন্দনাথ দত্ত ১২টির ওপর কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য রচনাবলি হলোÑসবিতা, সন্ধিক্ষণ, বেণু ও বীণা, হোম শিখা, ফুলের ফসল, কুহু ও কেকা, তুলির লিখন, অভ্র-আবীর, কাব্যসঞ্চয়ন প্রভৃতি। তার অনুবাদ কাব্যগুলোর মধ্যে তীর্থরেণু, তীর্থ-সলিল, মণিমঞ্জুষা এবং গদ্যরচনা জন্মদুঃখী, চীনের ধূপ, রঙ্গমল্লী (নাটক) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ১৯২২ সালের ২৫ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা