স্মরণীয়-বরণীয়

সংগীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার ও সংহতি শিক্ষক ওস্তাদ শাহ আবদুল করিমের ১০৭তম জন্মদিন আজ। বাংলা সংগীতে তাকে বাউল সম্রাট হিসেবে সম্বোধন করা হয়। তিনি প্রায় পনের শ’র ওপরে সংগীত রচনা এবং সুরারোপ করেন। সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য ২০০১ সালে তিনি একুশে পদকসহ  আড়াইশর বেশি পদক ও সম্মাননা লাভ করেন।

শাহ আবদুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে জš§গ্রহণ করেন। তিনি বাল্যকালে শিক্ষালাভের কোনো সুযোগ পাননি। বারো বছর বয়সে তিনি নিজ গ্রামের এক নৈশবিদ্যালয়ে কিছুদিন পড়াশোনা করেন। পরে নিজের একান্ত চেষ্টায় হয়ে ওঠেন স্বশিক্ষিত।  ছোটবেলা থেকে তিনি বাউল সংগীতের প্রতি অনুরাগী হয়ে ওঠেন। গুরু বাউল শাহ ইব্রাহিম মাস্তান বকশ থেকে তিনি সংগীতের প্রাথমিক শিক্ষা নেন। পরবর্তীকালে সাধক রশীদ উদ্দীন, শাহ ইব্রাহীম মাস্তান বকশের কাছ থেকেও বাউল গানের দীক্ষা লাভ করেন।  কিশোর বয়স থেকে তিনি গান লেখা শুরু করেন। প্রথম দিকে তার গান শুধু ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় হয়। তার গানে ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি সব অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। পেশায় তিনি একজন কৃষিজীবী ছিলেন।

শাহ আবদুল করিম জীবনের একটি বড় অংশ লড়াই করেন দারিদ্র্যের সঙ্গে। তিনি গানের অনুপ্রেরণা পান প্রখ্যাত বাউলসম্রাট ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ ও দুদ্দু শাহের দর্শন থেকে। শরিয়তি, মারফতি, দেহতত্ত্ব, গণসংগীতসহ বাউল গান এবং গানের অন্যান্য শাখার চর্চাও তিনি করেছেন। মৃত্যুর কয়েক বছর আগে তার গান ব্যাপক জনপ্রিযতা পেলে তিনি দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। এ পর্যন্ত তার সাতটি গানের বই প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা একাডেমি তার ১০টি গানের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করে। তার  কিছু জনপ্রিয় গান; বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, গাড়ি চলে না, রঙের দুনিয়া তরে চায় না, আমি বাংলা মায়ের ছেলে, আমি কূলহারা কলঙ্কিনী, কেমনে ভুলিবো আমি বাঁচি না তারে ছাড়া, কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু, বসন্ত বাতাসে সইগো, আইলায় না আইলায় নারে বন্ধু, সখী কুঞ্জ সাজাও গো ইত্যাদি। ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০