প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক, লেখক ও বুদ্ধিজীবী ভাষাসৈনিক শহীদুল্লাহ কায়সারের ৯৬তম জন্মদিন আজ। উপন্যাসে অবদানের জন্য ১৯৬৯ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮৩ সালে সাংবাদিকতায় মরণোত্তর একুশে পদক এবং সাহিত্যে ১৯৯৮ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পূর্ব মুহূর্তে ১৪ ডিসেম্বর রাতে তিনি অপহৃত হন, এরপর আর ফিরে আসেননি। শহীদুল্লাহ কায়সার ১৯২৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পুরো নাম আবু নাঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। ১৯৪৬ সালে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বিএ পাস করেন এবং অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর তিনি বাবার সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন। তবে এ ডিগ্রি লাভ করার আগেই তিনি লেখাপড়ার সমাপ্তি ঘটান। শহীদুল্লাহ কায়সার ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তিনি সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা করতেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর তিনি পূর্ব পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক ধারার সব আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৫১ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন-এ তিনি সাহসী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫২ সালের ৩ জুন তিনি গ্রেপ্তার হয়ে সাড়ে তিন বছর কারাভোগ করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি পুনরায় গ্রেপ্তার ও কারারুদ্ধ হন। ১৯৫৮ সালের ১৪ অক্টোবর সামরিক শাসক কর্তৃক তিনি তৃতীয়বারের মতো গ্রেপ্তার হন এবং প্রায় চার বছর কারাভোগের পর ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বরে মুক্তি লাভ করেন। শহীদুল্লাহ কায়সার ১৯৪৯ সালে সাপ্তাহিক ইত্তেফাক পত্রিকায় যোগদান করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি সংবাদ পত্রিকায় সহযোগী সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। তার রচিত প্রধান উপন্যাস সারেং বউ (১৯৬২)-এ মানুষ ও তার অস্তিত্বের সংগ্রামের কথা বর্ণিত হয়েছে। এছাড়া তিনি সংশপ্তকসহ ৬টি উপন্যাস, রাজবন্দীর রোজনামচা (১৯৬২) ও পেশোয়ার থেকে তাসখন্দ (১৯৬৬) তার স্মৃতিকথা ও ভ্রমণবৃত্তান্ত রচনা করেন। উপন্যাস সারেং বৌ-এর কাহিনী অবলম্বনে একটি চলচ্চিত্র এবং সংশপ্তক অবলম্বনে একটি জনপ্রিয় টিভি সিরিয়াল নির্মিত হয়েছে।
কাজী সালমা সুলতানা
