Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 4:28 am

স্মরণীয়-বরণীয়

শিক্ষাবিদ ও অধ্যাপক শহিদ সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহার ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব পালনকালে ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে শহিদ হন তিনি। ভাষা আন্দোলনের সময়ও তিনি প্রত্যক্ষভাবে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহা ১৯৩৪ সালের ১ মে পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় পশ্চিমবঙ্গে। তিনি ১৯৪০ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত বাঁকুড়া জিলা স্কুলে শিক্ষাগ্রহণ করেন। মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন এবং ১৯৫০ সালে প্রথম শ্রেণিতে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। দেশবিভাগের পর তিনি  পরিবারের সঙ্গে তৎকালীন পূর্ববাংলায় চলে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালে জোহা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। একই বছর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের লেকচারার পদে যোগদান করেন। পরে বৃত্তি নিয়ে তিনি লন্ডন ইম্পেরিয়াল কলেজে পিএইচডি ও ডিআইসি ডিগ্রি লাভ করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল বৈদ্যুতিক পদ্ধতিতে ক্রোমাইট খনিজের জারণ প্রক্রিয়া, যা পরবর্তীকালে ১৯৫৪ সালে লন্ডনের রসায়ন শিল্প পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৫৪ সালে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি রিডার পদে উন্নীত হন। ১৯৬৮ সালে আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন দানা বাঁধে। আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান ও ১৫ ফেব্রুয়ারি তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্ত সার্জেন্ট জহুরুল হক নিহত হন। এর প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিক্ষোভ করেন। ড. শামসুজ্জোহা সে সময় সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি না চালানোর জন্য অনুরোধ করেন। তার অনুরোধ উপেক্ষা করে সেনাবাহিনী মিছিলে গুলিবর্ষণ করে। তখন ড. শামসুজ্জোহা বলেন, ‘সেনাদের বুলেট আগে আমার বুকে বিদ্ধ হবে, তারপর আমার ছাত্রদের আঘাত করবে।’ এ কথা বলে ফিরে আসার সময় পেছন দিক থেকে সেনাসদস্যরা গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে ড. জোহা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। বিনা চিকিৎসায় পরের দিন তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে সারাদেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং এর ফলে আইয়ুব সরকারের পতন ত্বরান্বিত হয়। শামসুজ্জোহাকে দেশের প্রথম শহিদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে গণ্য করা হয়।

কাজী সালমা সুলতানা