অধ্যাপক, ভাষাবিদ, দার্শনিক ড. আহমদ শরীফের ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের অন্যতম রূপকার ছিলেন তিনি। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য ও সমাজ সম্পর্কে ব্যাপক গবেষণা ও প্রবন্ধ তাকে পণ্ডিত হিসেবে পরিচিতি দেয়।
আহমদ শরীফ ১৯২১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি বলে খ্যাত আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ছিলেন তার চাচা। জন্মের পর থেকে আহমদ শরীফ সাহিত্যবিশারদ আবদুল করিমের পরিবারেই বড় হয়ে ওঠেন। ১৯৪৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৭ সালে সৈয়দ সুলতান তার গ্রন্থাবলি ও তার যুগ শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
কলেজ অধ্যাপনার মাধ্যমে তিনি (১৯৪৫-৪৯) পেশাগত জীবন শুরু করেন। ১৯৫২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অস্থায়ী প্রভাষক হিসেবে অধ্যাপনা শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান, একাধিকবার কলা অনুষদের ডিন, সিন্ডিকেট সদস্য এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৩ সালের ৩১ অক্টোবর তিনি অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত ‘নজরুল অধ্যাপক পদে’ যোগ দেন এবং এক বছর ওই পদে কর্মরত ছিলেন।
ড. আহমদ শরীফ পঞ্চাশের দশক থেকে নব্বইয়ের দশকের শেষাবধি সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, দর্শন, ইতিহাসসহ প্রায় সব বিষয়ে নিয়মিতভাবে প্রবন্ধ লিখেছেন। তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক।
তার প্রথম সম্পাদিত গ্রন্থ ‘লায়লী-মজনু’ ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত হয়। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে বিচিত চিন্তা, স্বদেশ চিন্তা, বিশ শতকের বাঙালি, মধ্যযুগের সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতির রূপ, বাংলার সুফি সাহিত্য, বাঙালির চিন্তাচেতনার বিবর্তন ধারা, বাংলার বিপ্লবী পটভূমি, এ শতকে আমাদের জীবনধারার রূপরেখা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তিনি ‘একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায় বইটি (১৯৮৭)’ সম্পাদনা করেন। তিনি ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার লক্ষ্যে গঠিত ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের’ সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ১৯৯৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার উপকরণ হিসেবে ব্যবহারের জন্য দান করে দেয়া হয়।
কাজী সালমা সুলতানা