বাংলা সাহিত্যের খ্যাতনামা শিশুসাহিত্যিক, সম্পাদক এবং মণিমেলার প্রতিষ্ঠাতা বিমল ঘোষের ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের কাছে ‘মৌমাছি’ নামেই সমধিক পরিচিত।
বিমল ঘোষ ১৯১০ সালের ১২ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ম্যাট্রিক পাস করে বর্তমান গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্রাফটে ভর্তি হন। মুদ্রণ ও বিজ্ঞাপন বিষয়ে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেন।
তিনি কিশোর বয়স থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। সে সময় তার লেখা ছোটদের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখা ছাপা শুরু হয়। আর্ট কলেজে শিক্ষা লাভের পর তিনি অ্যাডভান্স পত্রিকার বিজ্ঞাপন বিভাগে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে যোগ দেন আনন্দবাজার পত্রিকায়। তিনি বিশ্বাস করতেন মানুষের সঙ্গে মানুষের সত্যিকারের পরিচয় গড়ে তোলা সম্ভব ভাবের আদান প্রদানের মধ্য দিয়েই। তার রচিত শিশুসাহিত্য বিষয়ক রচনা শতাধিক। তিনি চাইতেন ছোটরা অল্প বয়স থেকেই মানসিকভাবে দৃঢ়চেতা হয়ে উঠুক। বিমল ঘোষের উদ্যোগে ও ব্যবস্থাপনায় ১৯৪০ সালে আনন্দবাজার পত্রিকার ছোটদের আসর আনন্দমেলা প্রতিষ্ঠা ও প্রসার লাভ করে। এ সময় থেকে তিনি মৌমাছি ছদ্মনামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তিনি তার বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করেই ‘মণিমেলা’ নামের সংগঠন গড়ে তোলেন। চল্লিশের দশকে সেনোলা রেকর্ড কোম্পানি থেকে তার একটি নাটক ‘সোনার বাংলা’র গ্রামোফোন রেকর্ড দু’খন্ডে প্রকাশিত হয়। তার লেখা প্রথম উপন্যাস ‘মায়ের বাঁশি’ (১৯৫৮)। ছেচল্লিশের দাঙ্গা ও তৎপরবর্তী ঘরছাড়া মানুষের উদ্বাস্তু জীবন নিয়ে লেখা বিমল ঘোষের ‘ঝড়ের পালক’। তিনি তার প্রতিটি গল্পেই শিশুদের জন্য কিছু না কিছু বার্তা রেখেছেন, যা তাদের মানস গঠনে সহায়ক হতে পারে। এমনই দুটি গল্পগ্রন্থ ‘যে গল্পের শেষ নেই’ (১৯৪২) এবং ‘নয়া যুগের রূপকথা’ (১৯৪৭)। ছোটদের জন্য তিনি অজস্র ছড়া, কবিতা, নাটক, গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তার রচিত শিশু সাহিত্যের সংখ্যা ১৪০। রচনা করেছেন ‘মায়াময়ুর’ নামে জনপ্রিয় নাটক। তার রচিত ‘চেঙাবেঙা গ্রন্থের জন্য তিনি রাষ্ট্রীয় পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৫৩ সালে বুখারেস্টে অনুষ্ঠিত বিশ্ব যুব উৎসবে তিনি ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। বিমল ঘোষ আকাশবাণীর সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন। তার রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য; ইউরোপের অগ্নিকোণে, কামাল পরদেশী ও চেঙাবেঙা। ১৯৮২ সালের ৭ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা
