সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আবু জাফর শামসুদ্দীনের ১১২তম জন্মদিন আজ। তিনি উপন্যাস, ছোটগল্প ও মননশীল প্রবন্ধ রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। তার রচিত ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’ বাংলা সাহিত্যের একটি অনন্য রচনা। আবু জাফর শামসুদ্দীন ১৯১১ সালের ১২ মার্চ গাজীপুরের দক্ষিণবাগ গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। নিজ গ্রামের পাঠশালায় তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়। ১৯২৯ সালে তিনি হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর কিছুদিন ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে পড়াশোনা করেন। পরে পড়াশোনা ছেড়ে দিনে তিনি কলকাতায় গিয়ে দৈনিক ‘সোলতান’ পত্রিকায় সাব-এডিটর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি খুলনা, কলকাতা ও কটকে কিছুকাল কাজ করেন। পাশাপাশি ‘আজাদ’, ‘ইত্তেফাক’, ‘পূর্বদেশ’ ও ‘সংবাদ’ পত্রিকায় বিভিন্ন পদে চাকরি করেন। ‘অল্পদর্শী’ ছদ্মনামে দৈনিক সংবাদে ‘বৈহাসিকের পার্শ্বচিন্তা’ শীর্ষক সাপ্তাহিক কলাম লিখে তিনি জনপ্রিয় হন। ১৯৬১ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলা একাডেমির সহকারী অনুবাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আবু জাফর শামসুদ্দীন মানবেন্দ্রনাথ রায়ের ‘র্যাডিকেল ডেমোক্রেটিক পার্টি’র সঙ্গে ছিলেন। পরে ন্যাপের সঙ্গে যুক্ত হন এবং ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বৈহাসিকের পার্শ্বচিন্তা শীর্ষক সাপ্তাহিক কলাম লেখার মধ্য দিয়ে আবু জাফর তার সাহিত্যিক জীবন শুরু করেন। উপন্যাসের পাশাপাশি তিনি গল্প ও প্রবন্ধও রচনা করেন। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস: ভাওয়াল গড়ের উপাখ্যান, পদ্মা মেঘনা যমুনা, সংকর সংকীর্তন; গল্পগ্রন্থ: জীবন, শেষ রাত্রির তারা, রাজেন ঠাকুরের তীর্থযাত্রা প্রভৃতি; প্রবন্ধ: চিন্তার বিবর্তন ও পূর্ব পাকিস্তানি সাহিত্য; সোচ্চার উচ্চারণ, লোকায়ত সমাজ ও বাঙ্গালী সংস্কৃতি প্রভৃতি। এ ছাড়া তিনি বেশ কয়েকটি জীবনী, আত্মজীবনী, নাটক, ভ্রমণকাহিনি, দুটি অনুবাদগ্রন্থ এবং স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ রচনা করেন। তার রচনায় গণমানুষের সংগ্রাম ও উদার মানবতাবাদের পরিচয় পাওয়া যায়। তার রচিত কিছু গ্রন্থ ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু, মারাঠি ও জাপানি ভাষায় অনূদিত ও প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, সমকাল সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, শহীদ নূতনচন্দ্র সিংহ স্মৃতিপদক, মুক্তধারা সাহিত্য পুরস্কার এবং ফিলিপস পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৮ সালের ২৪ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা