স্মরণীয়-বরণীয়

লেখক ও শিল্পী সংঘ উদীচীর প্রতিষ্ঠাতা, সাহিত্যিক এবং শ্রমিক-সংগঠক সত্যেন সেনের ১১৬তম জন্মদিন আজ। তিনি ১৯০৭ সালের ২৮ মার্চ বর্তমান মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ছোটবেলায় ডাক নাম ছিল লস্কর। ১৯১৯ সালে সোনারং হাইস্কুলে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী দল যুগান্তরের সঙ্গে যুক্ত হন। ছাত্র অবস্থায় ১৯৩১ সালে তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে প্রথম কারাবরণ করেন। এ সময় জেলে থেকেই তিনি বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন। রাজনৈতিক কারণে ব্রিটিশ শাসনামলে ও পরে পাকিস্তান আমলেও তিনি একাধিকবার গ্রেপ্তার ও করাবরণ করেন। ১৯৪৮ সালে কারাগারে অত্যাচার ও নির্যাতনে সত্যেন সেনের শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সত্যেন সেন মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেন। পরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। গণমানুষের জন্য তিনি মানুষের জীবন বাস্তবতার গান রচনা ও সুর করেন। শ্রমিকদের নিয়েও তিনি গান এবং পালা রচনা করেন। তার লেখা ১১টি গানের মধ্যে ‘চাষি দে তোর লাল সেলাম/তোর লাল নিশানারে’ গানটি তখন চাষিদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৫৬ সালে বিক্রমপুরের ষোলঘরে কৃষক সমিতির সম্মেলনে তার নেতৃত্বে গানটি গাওয়া হয়। সত্যেন সেন একজন নির্ভীক সাংবাদিক ছিলেন। প্রথমে দৈনিক ‘মিল্লাত’ পরবর্তী সময়ে দৈনিক ‘সংবাদে তিনি সাংবাদিকতা করেন। তিনি সাহিত্য রচনায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তিনি ১৫টি উপন্যাসসহ বেশ কিছু সাহিত্য রচনা করেন। তার রচিত ছোটদের বিখ্যাত উপন্যাস ‘পাতাবাহার’ । ১৯৬৯ সালে সত্যেন সেন রণেশ দাশগুপ্ত, শহীদুল্লাহ কায়সারসহ একঝাঁক তরুণকে সঙ্গে নিয়ে উদীচী গঠন করেন। উদীচী ১৯৬৮ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বাঙালির সার্বিক মুক্তির চেতনাকে ধারণ করে গড়ে তোলে সাংস্কৃতিক সংগ্রাম। এ সংগ্রাম গ্রামবাংলার পথে ঘাটে ছড়িয়ে পড়ে। সত্যেন সেন ১৯৬৯ সালে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ১৯৮৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন। তিনি ১৯৮১ সালে ৫ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০