বাংলা চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত অভিনেত্রী মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের ৯২তম জন্মদিন আজ। চলচ্চিত্রের কালজয়ী এই অভিনেত্রী ১৯৬৩ সালে ‘সাত পাকে বাঁধা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সিলভার প্রাইজ ফর বেস্ট অ্যাকট্রেস’ পুরস্কার জয় করেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী, যিনি কোনো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হন। সুচিত্রা সেন ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনা জেলার সদর পাবনায় জš§গ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি বা সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার অন্তর্গত সেন ভাঙ্গাবাড়ী গ্রামে। তার জš§গত নাম রমা দাশগুপ্ত। তবে বাবা ডাকতেন কৃষ্ণা নামে। পাবনা শহরের বাড়িতেই তিনি তার শৈশব-কৈশোরের দিনগুলো কাটান। তিনি পাবনা গার্লস স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগে পরিবারের সঙ্গে কলকাতায় চলে যান তিনি। ১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে সুচিত্রা সেনের চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু। যদিও সিনেমাটি মুক্তিলাভ করেনি। পরের বছর ১৯৫৩ সালে উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ সিনেমায়। ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ও ‘অগ্নিপরীক্ষা’ সিনেমা সুচিত্রা সেনকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে আসে। ১৯৫৫ সালের ১ জানুয়ারি মুক্তি পায় তার প্রথম হিন্দি সিনেমা ‘দেবদাস’। এই ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান তিনি। সুচিত্রা সেন মোট ৬০টি সিনেমায় অভিনয় করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলা ৫৩টি ও হিন্দি ভাষার সাতটি। বাংলা সিনেমায় তার নায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি সফল মহানায়ক উত্তম কুমার। উত্তম-সুচিত্রা জুটির ৩০টি সিনেমা দর্শকপ্রিয়তা পায়। এর মধ্যে ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘সবার উপরে’, ‘পাপমোচন’, ‘শিল্পী’, ‘সাগরিকা’, ‘পথে হলো দেরি’, ‘হারানো সুর’, ‘গৃহদাহ’ ও ‘প্রিয় বান্ধবী’ উল্লেখযোগ্য। ১৯৭৮ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত শেষ সিনেমা ‘প্রণয় পাশা’। সুচিত্রা সেন বেশ কয়েকবার সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। ১৯৭২ সালে তিনি ‘পদ্মশ্রী’ পদকে সম্মানিত হন। ২০০৫ সালে তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার দেবার জন্য মনোনীত হন। কিন্তু চলচ্চিত্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ এই সম্মাননা নিতে অস্বীকৃতি জানান সুচিত্রা সেন। ১৯৭৮ সালে তিনি চলচ্চিত্র থেকে চিরতরে অবসর নেন। এর পর থেকে প্রায় ৩৬ বছর তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকেন। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা