প্রখ্যাতক লোকগানের শিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ইন্দ্রমোহন রাজবংশীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, জারি, সারি, মুর্শিদি গানের শিল্পী ও গানের বড় সংগ্রাহক ও শিল্পী। ২০১৮ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। ইন্দ্রমোহন রাজবংশী ১৯৪৬ সালের ২৬ জানুয়ারি ঢাকা শহরে জš§গ্রহণ করেন। তার পরিবার পাঁচ পুরুষ ধরে সংগীতের সঙ্গে জড়িত। তার পিতামহ কৃষ্ণ দাস রাজবংশীযাত্রা, পালাগান, নজরুলগীতি ও লোকগান করতেন। ইন্দ্রমোহন রাজবংশী ১৯৫০-এর দশকের শুরুতে পিতামহের কাছে সংগীত শিখতে শুরু করেন। পরে নজরুলগীতি চর্চার জন্য বুলবুল ললিতকলা একাডেমি থেকে পাঁচ বছরের কোর্স শেষ করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি হাফিজুর রহমানের কাছে লোকগানে তালিম নেন। ১৯৭১ সালে তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সংগীত পরিবেশন করা শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি সরকারি সংগীত কলেজে যোগদান করেন। সেখানে তিনি লোকসংগীত বিভাগের প্রধান হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। ইন্দ্রমোহন রাজবংশী চলচ্চিত্র, বেতার, টেলিভিশন ইত্যাদিতে অনেক গান পরিবেশন করেন। ১৯৬৭ সালে ‘চেনা অচেনা’ চলচ্চিত্রে তিনি নেপথ্য কণ্ঠ দেন। ১৯৯৮ সালে তিনি বাংলাদেশ লোকসংগীত পরিষদ নামে একটি লোকসংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনটি লোকগান অনুশীলন, সংরক্ষণ, প্রচার ও গবেষণার কাজ করে। তিনি শিশুদের জন্য প্রায় ১০০টি লোকগান লিখেছেন। গান গাওয়ার পাশাপাশি তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকগান সংগ্রহ করতেন। এক হাজারেরও বেশি কবির লেখা কয়েক লাখ গান তিনি সংগ্রহ করেছেন। ২০১৪ সালের মধ্যে তিনি নয়টি গানের অ্যালবাম প্রকাশ করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে ইন্দ্রমোহন রাজবংশী যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য মনস্থির করেন। কিন্তু পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পড়ে যাওয়ায় সম্মুখযুদ্ধে তিনি যেতে পারেননি। সে সময় তিনি নিজের নাম পরিচয় গোপন করে পাকিস্তানিদের দোভাষী হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন। পরবর্তী সময়ে সুযোগ বুঝে সেখান থেকে চলে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা দিতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সংগীত পরিবেশন শুরু করেন। সংগীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৮ সালে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক লাভ করেন। ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল তিনি মহামারি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
Ñকাজী সালমা সুলতানা